জরুরি পরিস্থিতি ছাড়াই ক্ষমতা ব্যবহার করল সরকার

ম তামিম, বিদ্যুৎ খাত বিশেষজ্ঞ
ম তামিম, বিদ্যুৎ খাত বিশেষজ্ঞ

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছ থেকে দাম বাড়ানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। নিয়মিত দাম সমন্বয়ের বিষয়টি সামনে এনে এটি করা হয়েছিল। কিন্তু তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ক্ষেত্রে প্রতি মাসে মূল্য সমন্বয় করে তা করে দেখিয়েছে বিইআরসি। বিদ্যুৎ খাতেও এটি চাইলে বিইআরসি করতে পারত। সরকার ভর্তুকি জানিয়ে দিলেই এটি করা সম্ভব।

বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম নির্ধারণের জন্য এক মাস সময় লাগতেই পারে। এটা তেমন বেশি সময় নয়। বিশ্বে কোথাও প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় হয় না। পরিস্থিতি তৈরি হলে এটা সমন্বয় করা হয়। বিদ্যুৎ খাতের পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল থাকে। বিইআরসির দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় সরকারের প্রতিও আস্থা তৈরি হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যৌক্তিকভাবে দাম বাড়ালে ভোক্তা মেনে নেয়। কিন্তু হুট করে দাম বাড়ালে ভোক্তার আস্থা থাকে না। এতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না।

তবে সরকার আইন সংশোধন করে দাম বাড়ানোর ক্ষমতা নেওয়ার পর বিইআরসি গণশুনানি করেছে। এতে আশাবাদী হয়েছিলাম। ভেবেছি, সরকার জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া তাদের মূল্য সমন্বয়ের ক্ষমতা ব্যবহার করবে না। কিন্তু এখন জরুরি পরিস্থিতি ছাড়াই ক্ষমতা ব্যবহার করল সরকার।

নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়াল। বিদ্যুৎ খাতে কখনোই পরিস্থিতি এমন হয় না যে তিন দিনের মধ্যে দাম বাড়াতে হবে। সরকার চাইলে তিন দিন পর বিইআরসির মাধ্যমেই দাম বাড়াতে পারত। এতে সরকারের প্রতিও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ত। নির্বাহী আদেশে করার কোনো দরকার ছিল না। এতে কোনো যৌক্তিক কারণ দেখি না। কোনো পক্ষের পরামর্শে এটা হতে পারে। এখন কমিশনের কিছু করার থাকল না। তাদের ক্ষমতা খর্ব করা হলো।

নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো সূত্র মানা হলো না। এ খাতে দাম নির্ধারণের স্বচ্ছতা আর থাকল না। শুনানি হলে প্রশ্ন তোলা যায়, দুর্নীতি-অনিয়ম ও কোম্পানির অদক্ষতার বিষয় সামনে আসে। পেট্রোবাংলা এর আগে গ্যাসের দাম বাড়াতে বাড়তি এলএনজি আমদানির তথ্য দিয়েছিল। সেটি শুনানির সময় ধরা পড়ে। বিইআরসির শুনানির ক্ষেত্রে হয়তো সময় কমানো যেতে পারে। এটাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ালে বাজারে মনোপলি (একচেটিয়া) তৈরি হতে পারে। এতে কোম্পানি অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নিতে পারে। অদক্ষতা আরও বাড়ে। তাই অবশ্যই বিইআরসির মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো দরকার ছিল।

বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোয় বাজারে তেমন প্রভাব পড়ার কথা নয়। তবু দেখা যাবে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ৫ টাকা বাড়লে বাজারে জিনিসপত্রের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা এখানে পুরোনো।

জ্বালানি তেলের দাম ১৫ শতাংশ বাড়লে পরিবহন ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এতে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। শক্ত হাতে সরকারকে দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ম তামিম: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী