কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় একজন রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু ও দুজন আহত হয়েছেন। আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল সোমবার রাত তিনটার দিকে আশ্রয়শিবিরের ই/৩ ব্লক এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মৃত যুবকের নাম মোহাম্মদ সলিম (৩৮)। আহত ব্যক্তিরা হলেন মো. ইউনুস (৩৫) ও সবি উল্লাহ (৩৪)।
আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে আমির জাফর বলেন, আরসা ও আরএসওর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনার খবর পেয়ে এপিবিএন ও থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একজন রোহিঙ্গা যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর আহত দুজন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রোহিঙ্গা নেতা ছৈয়দ করিম বলেন, সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে আরসার ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী আশ্রয়শিবিরের ই/৩ ব্লকের বালুর মাঠ এলাকায় অবস্থান নেয়। কয়েক মাস আগে আরসাকে তাড়িয়ে এলাকাটি দখলে নেয় আরএসও। আরসার উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আরএসওর ২০–২৫ জন সন্ত্রাসী। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তাতে আশ্রয়শিবিরের নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ সলিম, ইউনুস ও সবি উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ সলিমের মৃত্যু ঘটে ঘটনাস্থলে। সকালে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে। আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় কয়েক মাস ধরে আরসা ও আরএসওর সন্ত্রাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। তাতে সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সন্ধ্যার পর আশ্রয়শিবিরসমূহে সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা বেড়ে যায়।
উখিয়া থানার ওসি মো. শামীম হোসেন বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর নিহত রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এপিবিএন তথ্যমতে, গত ছয় মাসে একাধিক সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় অন্তত ২৭ জন খুন হয়েছেন। ২০২৩ সালে খুন হয় ৬৪ জন। এসব ঘটনায় আরসার শীর্ষ নেতাসহ ১২৯ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরে ৯ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করেন।