আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহকারীদের তালিকা নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ ও বিতর্ক আছে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই সেই তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। এখন নতুন করে তালিকা তৈরি করতে দরপত্র আহ্বান করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সরকার মূলত দুইভাবে এলএনজি আমদানি করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান ও কাতার থেকে সরকারি পর্যায়ে চুক্তির আওতায় দীর্ঘ মেয়াদে আর চাহিদা বুঝে খোলাবাজার থেকে আমদানি করা হয় তালিকায় থাকা কোম্পানির কাছ থেকে দর নিয়ে।
খোলাবাজার থেকে এলএনজি সরবরাহকারী কোম্পানির তালিকা তৈরি করতে ১০ নভেম্বর উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করছে সরকার। প্রথম আলোকে আজ শুক্রবার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) নির্দেশনায় এলএনজি আমদানির কাজটি করে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। এ দুটি সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আগ্রহী কোম্পানির কাছ থেকে আবেদন জমা নিতে ১০ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি আকারে দরপত্র প্রকাশ করার কথা রয়েছে। ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন জমার সুযোগ থাকবে। এর মধ্যে যাঁরা আবেদন জমা দেবেন, তাঁদের থেকে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। চূড়ান্ত তালিকায় থাকা কোম্পানির সঙ্গে এলএনজির ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি (মাস্টার সেলস অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা এমএসপিএ) করা হবে।
পেট্রোবাংলা ও আরপিজিসিএলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবার এলএনজি কিনতে উন্মুক্ত দরপত্র করার সুযোগ নেই। তাই যাদের সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি আছে, তাদের থেকেই দর নিতে হয়। এলএনজি জরুরি পণ্য, তাই আমদানি বন্ধ না করে আগের সরকারের করা তালিকার কোম্পানি থেকে দর নিয়ে এলএনজি কেনা হয়েছে। তবে নতুন দরপত্রের পর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কোম্পানি চূড়ান্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, দরপত্র ছাড়া কাজ করতে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন করেছিল বিগত সরকার। এ আইনের কোনো সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না, এমন বিধানের কারণে এটি দায়মুক্তি আইন হিসেবে পরিচিত। সমালোচনা সত্ত্বেও দফায় দফায় এ আইনের মেয়াদ বাড়িয়েছে বিগত সরকার। খোলাবাজার থেকে এলএনজি কিনতে ২৩টি কোম্পানির সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিও (মাস্টার সেলস অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট) করা হয় বিশেষ বিধান আইনে। এলএনজি কিনতে চাইলে এসব কোম্পানির মধ্য থেকে আগ্রহীরা দর প্রস্তাব করে। যে সবচেয়ে কম দাম প্রস্তাব করে, তাঁকে ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশেষ বিধান আইন স্থগিতের ঘোষণা দেয় গত ১৮ আগস্ট। এতে বলা হয় এ আইনের অধীনে ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকবে। তবে ইতিমধ্যে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় গৃহীত সব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এরপর খোলাবাজার থেকে এলএনজি কিনতে পুরোনো ২৩টি কোম্পানির তালিকা গত ৪ সেপ্টেম্বর নতুন করে অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।