নারীবৈষম্য নিরসনে অবদান রাখছে এইউডব্লিউ

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কার-উইকির হাতে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন (ডান থেকে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদ, ডিন অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস বিনা খুরানা, উপাচার্য রুবানা হক (মাঝখানে) ও ডিন অব হিউম্যানিটিজ ডেভিড টেইলর (বাঁয়ে)
ছবি: প্রথম আলো

নারীবৈষম্য দূর করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত তৈরিতে অবদান রাখছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাহস রয়েছে, যা ছড়িয়ে যাচ্ছে সবার মধ্যে। এই সাহসই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।

বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কার-উইকি এসব কথা বলেন। তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান উপলক্ষে এই সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম নগরের এম এম আলী সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সম্মেলনকক্ষে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কার-উইকি ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি সুইস সেন্টার অব অ্যাক্রেডিটেশন অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স ইন হায়ার এডুকেশনের উপদেষ্টা বোর্ডের সভাপতি এবং অস্ট্রিয়ান সায়েন্স বোর্ডের সদস্য।

সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কার-উইকি। তিনি বলেন, ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন ব্যতিক্রমী একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যা নারী শিক্ষা ও নারী দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে; যা প্রশংসনীয়। শিক্ষা প্রত্যেক মানুষ তথা সমাজ উন্নয়নের মূল ভিত্তি।’

বক্তব্য দেন উপাচার্য রুবানা হক

এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কার-উইকি বলেন, ‘আমরা জানি, একটি স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ হলো সর্বোচ্চ ফলপ্রসূ বিনিয়োগ। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় নারী শিক্ষার উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিদিনই এই বিশ্ববিদ্যালয় নারীবৈষম্য দূর করতে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত তৈরি করতে অবদান রাখছে। সমাজে পরিবর্তন আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের শিক্ষার্থীদের সমাজে সাহসী হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’

জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি সাহসিকতাকে অন্যতম গুণ আখ্যায়িত করে এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কার-উইকি বলেন, সমাজে পরিবর্তন আনতে সবার সামনে উঠে আসতে হবে৷ এর জন্য চাই সাহস; যা এখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছে, যা ছড়িয়ে যাচ্ছে সবার মধ্যে। আর এই সাহসই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্যদের থেকে আলাদা করে। এবং তাঁরা সমাজে নিজেদের চিন্তাচেতনা দিয়ে অন্যদের থেকে ব্যতিক্রমী হবে। যা শুধু এ দেশেই নয়, ইউরোপ ও সুইজারল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগান ছাত্রীদের যেভাবে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে, তা সাহসিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সমাবর্তনে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নয়, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নও হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা শুধু শিক্ষিতই নয়, স্বনির্ভরও হয়ে ওঠে, সমাজে অবদান রাখার যোগ্যতা অর্জন করে। এইউডব্লিউয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক দিক দিয়েই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি যোগ্য। এখানকার শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রুবানা হক বলেন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ছাত্রীরা এখানে সাহসিকতা বিষয়ে অনেক কিছু শিখছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় হলো উদ্ভাবনের ক্ষেত্র। একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ও একাডেমিক ব্যক্তিরা জনগণ এবং রাজনীতিবিদদের সহায়ক হতে পারেন। তবে এই সহায়ক ভূমিকার ক্ষেত্রে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সমাজ ও জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষা মেটাতে ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের ছাত্রীরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক। অধিকার আদায়ে, সম–অধিকার চর্চায় ও সহিংসতা দূর করতে তাঁরা নিজেদের জায়গায় সোচ্চার হোক।’ তিনি জানান, এইউডব্লিউ এক হাজার আফগান শিক্ষার্থীকে এখানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

আলোচনা পর্ব শেষে এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কার-উইকির হাতে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। উত্তরীয় পরিয়ে দেন রুবানা হক ও কামাল আহমেদ।

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক নেহাল আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব হিউম্যানিটিজ ডেভিড টেইলর ও ডিন অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স বিনা খুরানা। গান পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এরপর ‘বাংলাদেশের উচ্চমাধ্যমিক কলেজের রূপান্তর’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এইউডব্লিউয়ের এমএড প্রোগ্রামের গবেষণা সহকারী নুজহাত জাহান ও সুমাইয়া হালিম। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রোগ্রাম পরিচালক সেলিম রেজা।