আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। নির্বাচন নিয়ে ড. কামালের পক্ষে ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে গণফোরাম।
ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের আশঙ্কা, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণকে চেষ্টা করতে হবে, যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের এক আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
‘গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আসুন ঐক্যবদ্ধ হই’ স্লোগানে দলের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা করে গণফোরাম। সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
বক্তারা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে মামলা দিয়ে হয়রানির নিন্দা জানান।
ড. কামাল অসুস্থ থাকায় খুব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর ধরে আমরা এই সংগঠন চালিয়ে আসছি। আজকে জনগণের ঐক্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। আমার একটাই আবেদন, আজকে আমরা জাতীয় ঐক্যের জন্য সবাই একত্রে কাজ করি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।’
গণফোরামের সঙ্গে থাকার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান ড. কামাল হোসেন। এর আগে সভাপতির লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
সভাপতির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতি চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ড. কামাল হোসেনের পক্ষে ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো—১. একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা; ২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা; ৩. নির্বাচনকে সামনে রেখে বাক্স্বাধীনতা, সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা–সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে বাধা না দেওয়া; ৪. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন সরকার বাধ্য থাকবে; ৫. বিরোধী দলগুলোর নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং ৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যের শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনী সংঘাত থেকে বের হওয়ার জন্য এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে দিকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
স্বাগত বক্তব্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ৩০ বছর আগে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, কালোটাকা ও রুগ্ণ রাজনীতির বিপরীতে একটি সুস্থ ধারার রাজনীতির জন্য গণফোরাম সৃষ্টি হয়েছিল। গণফোরাম থেকে বেরিয়ে অনেক নেতা সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতার প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন কখনো আপস করেননি।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘দেশে অসুস্থ রাজনীতি চালু হয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষ ড. ইউনূস ও ড. কামাল হোসেনকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু আমাদের দেশে তাঁদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বীর প্রতীক বলেন, ‘যে গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, দেশে সেই গণতন্ত্র নেই।’