পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেছেন, ‘মামলার আসামি হলেই গ্রেপ্তার করা যাবে না। শুধু তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেই গ্রেপ্তার করা হবে। আমরা পুলিশকে বলেছি, থানায় মামলা রেকর্ড করার আগে তা যাচাই-বাছাই করে নিতে। মামলা হলেই যে গ্রেপ্তারের আওতায় আসবে, সেটা আইন বলে না।’
শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঢালাও মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, ‘আসামি হলেও নিরপরাধ কারও ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। মামলার ক্ষেত্রে সরাসরি পুলিশের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। যে মামলাগুলো হচ্ছে, সেগুলোতে আসামি হিসেবে অনেক সাংবাদিক যেমন আছেন, তেমনি অনেক পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। সাংবাদিকদের চেয়ে মামলায় পুলিশের সদস্য অনেক গুণ বেশি আসামি হয়েছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), জেলা প্রশাসক (ডিসি )ও বিভাগীয় কমিশনারদেরও আসামি করা হয়েছে। তবে যারা সত্যিকার অর্থে ঘটনায় জড়িত, তাদের আসামি করলে মামলা শক্ত ও তদন্ত করা সহজ হয়। আমরা থানা-পুলিশকে বলেছি থানায় মামলা রেকর্ড করার আগে তা যাচাই-বাছাই করে নিতে। মামলা হলেই যে গ্রেপ্তারের আওতায় আসবে, সেটা আইন বলে না। আমরা পৃথক তদন্ত কমিটি করেছি। আমরা মামলার তথ্যাদি সংগ্রহ করে তা যাচাই–বাছাই করছি, বিশ্লেষণ করছি।’
আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেছেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইদানীং বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য কিছু ক্ষুদ্র গোষ্ঠী কাজ করে থাকতে পারে। কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না। এ দেশ সব মানুষের। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সবার। দুর্গোৎসবে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে আইজিপি চট্টগ্রাম বিভাগের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মতবিনিময় করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ প্রমুখ।
পুলিশ সংস্কার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, পুলিশ সংস্কার একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। সরকারের কমিটির বাইরে পুলিশ নিজেরাও সংস্কারের জন্য কমিটি করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ৪৪ জন পুলিশ নিহত ও ২ হাজার ৫০০–এর মতো আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান। পুলিশের চলমান যৌথ অভিযানের বিষয়ে আইজিপি বলেন, এখন পর্যন্ত পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর লুণ্ঠিত অস্ত্রের প্রায় ৭৫ শতাংশ উদ্ধার (২৩৮টি অস্ত্র) করা সম্ভব হয়েছে।
মব জাস্টিস প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, ‘ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে তিনটি ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামে গান গাইতে গাইতে একজন যুবককে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। জাহাঙ্গীরনগরে আমরা অপরাধী চক্রের একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ঘটনা ঘটিয়েছিল, তাদের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে জবানবন্দি নিয়েছি। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আমরা একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, মব জাস্টিসের নামে কেউ আইন হাতে তুলতে নেবেন না। যে–ই অপরাধ করুক, ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইনের আওতায় আনা হবে তাকে।’