আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি বাতিলের আহ্বান টিআইবির

টিআইবি
টিআইবি

ভারতের আদানি গোষ্ঠীর থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চুক্তিকে অসম, অস্বচ্ছ ও বৈষম্যমূলক বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা ও প্রয়োজনে বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, শেয়ার ও হিসাব জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত আদানি গোষ্ঠী থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এই বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে।

জাতীয় স্বার্থ এবং এই চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা দেশের জনগণের বহনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে চুক্তির শর্তসমূহ পুঙ্খানুপঙ্খ বিচার–বিশ্লেষণ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন ও প্রয়োজনে চুক্তি বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।  

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি আরও বলছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনতে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি দাম দিতে হবে। আবার এই বাড়তি দামে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে—এমন বাধ্যবাধকতার কথাও রয়েছে পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টে (পিপিএ)।  

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ফাঁকিবাজি এবং হিসাবপত্রে কারসাজি ও জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত আদানি গোষ্ঠীর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের সঙ্গে করা পিডিবির এই চুক্তি আন্তর্জাতিকভাবে নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণে অসম ও অস্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্বভাবে বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চুক্তিটিতে বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে আদানি গোষ্ঠীর স্বার্থকে এমনভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এই প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে যেতে পারে, যার বোঝা এ দেশের জনগণকে বইতে হবে।’  

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আদানি ওয়াচসহ নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সূত্রে প্রকাশিত তথ্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কয়লা ব্যবহৃত হবে তা আসবে আদানির মালিকানাধীন ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিতর্কিত খনি থেকে এবং আদানির জাহাজে করে। কয়লা খালাস হবে আদানির মালিকানাধীন বন্দরে। এসব কয়লা পরিবহন করা হবে আদানির মালিকানাধীন ট্রেনে করে। আবার উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরিবহন করা হবে আদানিরই নির্মিত সঞ্চালন লাইনে। আরও জানা যাচ্ছে, জ্বালানি খরচসহ এ পুরো প্রক্রিয়ার ব্যয় বইতে হবে বাংলাদেশকে, যা বৈশ্বিক বিদ্যুৎ খাতের অভিজ্ঞতায় অভূতপূর্ব। ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের জন্য দেশের অন্য যেকোনো সরবরাহকারী থেকে পাওয়া বিদ্যুতের তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি হারে মূল্য দিতে হবে। একইভাবে আদানির গোড্ডা প্রকল্পের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দেশি-বিদেশি উদ্যোগে পরিচালিত অন্য যেকোনো প্রকল্পের তুলনায় অগ্রহণযোগ্য বেশি হারে অর্থ দিতে হবে।

বৈষম্যমূলক এ চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কারোরই নেই উল্লেখ তিনি বলেন, ‘পিডিবি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমাদের আহ্বান, অনতিবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে এই চুক্তির সব শর্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুখ্যাতি আছে এমন বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণপূর্বক সংশোধন করা হোক এবং দেশের ও জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে প্রয়োজনে এই চুক্তি বাতিল করা হোক। পিডিবি তথা দেশের জনগণকে জিম্মি করে বাংলাদেশকে আদানি গ্রুপের জালিয়াতিনির্ভর ব্যবসা প্রসারের অভয়ারণ্যে রূপান্তর করার দৃশ্যমান ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করার বিকল্প নেই।’