বুয়েট শিক্ষার্থী খুন

ফারদিনের গতিবিধি জানা গেলেও খুনি শনাক্ত হয়নি

  • ডিবি বলছে, যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে তারাব বিশ্বরোডে যান ফারদিন।

  • লেগুনার চালক ও সহকারী নজরদারিতে।

  • এর আগে র‌্যাব বলেছিল, তাঁর সর্বশেষ অবস্থা ছিল চনপাড়া।

ফারদিন নূর

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূরের সর্বশেষ অবস্থান তারাব বিশ্বরোড এলাকায় ছিল বলে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি বলছে। এর আগে ফারদিন হত্যার ছায়া তদন্তের সঙ্গে যুক্ত র‍্যাব বলেছে, তাঁর সর্বশেষ অবস্থান ছিল নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সংস্থা দুটি ফারদিনের গতিবিধির সব তথ্য পেলেও কারা কী কারণে তাঁকে হত্যা করেছে, সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি।

৪ নভেম্বর নিখোঁজের পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রামপুরা থানায় তাঁর বাবা মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁর বন্ধু আয়াতুল্লাহ বুশরা কারাগারে রয়েছেন।

ডিবি সূত্র জানায়, ৩ নভেম্বর দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে ফারদিনকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে দেখা যায়। সেখান থেকে একটু দূরে লেগুনাস্ট্যান্ডের দিকে যান তিনি। সেখানে সাদা গেঞ্জি পরা এক তরুণের সঙ্গে কথা বলে তিনি লেগুনায় ওঠেন। লেগুনায় তাঁর সঙ্গে আরও চার–পাঁচজন ওঠেন। পরে লেগুনাটি সুলতানা কামাল সেতু পার হয়ে তারাবর দিকে যায়। রাত ২টা ৪০ মিনিটে তারাব বিশ্বরোডে তাঁর সর্বশেষ অবস্থান ছিল।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ফারদিনের মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি। তাঁকে কোথায়, কারা হত্যা করেছে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু পাওয়া যায়নি। তবে ওই লেগুনার চালক ও সহযোগীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, বন্ধু বুশরার সঙ্গে রিকশায় করে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ফারদিন রামপুরা সেতু এলাকায় যান। সেখান থেকে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকায় যান ১০টা ৫৩ মিনিটে। এরপর রাত ১১টা ৯ মিনিটে পুরান ঢাকার জনসন রোডে যান। ওই সময় বুশরা মুঠোফোনে বার্তা দিয়ে তিনি বাসায় গেছেন কি না, জানতে চান। উত্তরা ফারদিন ‘হ্যাঁ’ বলেন।

ডিবি বলছে, রাত ১২টা ৫০ মিনিটে ফারদিনের অবস্থান ছিল গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায়। পরে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে রাত ১টা ৫৯ মিনিটে আরেক বন্ধুর সঙ্গে কথাবার্তার তথ্য পাওয়া যায়। ঘটনার দিন দিবাগত রাত ১০টা ৫১ মিনিট থেকে ১১টা ৪ মিনিটের মধ্যে তিন দফায় ফারদিন একজনের সঙ্গে কথা বলেন।

এর আগে র‌্যাব সূত্র বলেছিল, ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে ফারদিন এক বন্ধুকে রামপুরায় পৌঁছে দেন। এরপর রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে কেরানীগঞ্জের টাওয়ার, ১০টা ৫৩ মিনিটে বাবুবাজারে, ১১টা ৯ মিনিটে জনসন রোড এবং রাত ২টা ১ মিনিটে যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচার টাওয়ার এলাকায় তাঁর অবস্থান ছিল। সর্বশেষ রাত ২টা ৩৪ মিনিটে তাঁর মুঠোফোনের অবস্থান চনপাড়ায় পাওয়া যায়। এরপর ফোন আর সচল ছিল না।

রাত সোয়া দুইটার দিকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে দেখা যায় ফারদিনকে। পরে তিনি লেগুনায় করে তারাব বিশ্বরোড এলাকায় যান।

র‌্যাব সূত্র বলছে, ঘটনার দিন দিবাগত রাত ২টা ১ মিনিট থেকে ২টা ৩৪ মিনিট পর্যন্ত ফারদিন ও সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তির মুঠোফোনের অবস্থান কাছাকাছি ছিল। ওই দুজনের একজন বাসচালক এবং অন্যজন তাঁর সহকারী। এই দুই পরিবহনকর্মী দিনে উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস চালাতেন। তাঁরা গভীর রাতে ফাঁকা বাসে যাত্রী তুলে জিম্মি করে টাকাপয়সা কেড়ে নিতেন। তাঁরা চনপাড়াকেন্দ্রিক অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িত।

তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় উঠে যাত্রীদের তিনজন বিশ্বরোডে এবং একজন পরের স্টপেজে নামেন। ওই জায়গা থেকে চনপাড়ায় যেতে প্রায় এক ঘণ্টা লাগার কথা। ফলে রাত আড়াইটার দিকে ফারদিনের চনপাড়ায় যাওয়া সম্ভব নয়। চনপাড়া থেকে তাঁর মরদেহ একটি প্রাইভেট কারে তুলে নদীতে ফেলার তথ্যও সঠিক নয়। কারণ, রাত সোয়া দুইটার দিকে তাঁর অবস্থান যাত্রাবাড়ীতে ছিল। আর ওই গাড়ির গতিবিধি ছিল রাত দেড়টার দিকে।

গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে আসেন ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে এখন পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট। আমি তাদের ওপর ধৈর্য রাখতে চাই।’ বুশরার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি এখনো তাঁকে সন্দেহের বাইরে রাখছি না।’