বন্ধুর জন্মদিন উদ্যাপনের কথা বলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এনে ১৪ বছর বয়সী কিশোর নূর নবীকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও পরামর্শদাতা কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৩২ বছর বয়সী কামরুল ইসলাম পেশায় নির্মাণশ্রমিক। গতকাল শনিবার রাতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠাছড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খুনের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে কামরুল ইসলাম পুলিশকে বলেন, টাকার জন্যই আরেক কিশোরকে দিয়ে নূর নবীকে চট্টগ্রামে ডেকে আনেন তিনি। মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় ও ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তাকে হত্যা করা হয়। খুনে নূর নবীর বন্ধু ১৬ বছর বয়সীর কিশোরের সঙ্গে তিনিও অংশ নেন।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা আজ রোববার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় দুই কিশোরের প্রতিবেশী ছিলেন নির্মাণশ্রমিক কামরুল ইসলাম। হত্যায় অংশ নেওয়া ১৬ বছর বয়সী কিশোর তার মায়ের ২০ হাজার টাকা চুরি করেছিল। এই টাকা কীভাবে মাকে ফিরিয়ে দেবে, কামরুলের কাছে সেই পরামর্শ চায় সে। তখন কামরুল তাকে তার কিশোর বন্ধু নূর নবীকে কৌশলে জন্মদিন উদ্যাপনের কথা বলে প্রথমে তার গ্রামের বাড়ি ফেনী ও পরে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। নিজে ধরা পড়ার ভয়ে ফেনীতে কোনো ঘটনা ঘটাননি কামরুল। পরে চট্টগ্রাম নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে নিজেরা ধরা পড়ার আশঙ্কায় নূর নবীকে খুন করেন তাঁরা। ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোর নূর নবীকে ছুরিকাঘাত করে। তার আগে কামরুল ইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন।
ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের থাকত ১৪ বছর বয়সী কিশোর নূর নবী। তার বাবা পেশায় একজন বাবুর্চি। ছেলের মুক্তিপণের জন্য দাবি করা ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হলে তিনি ৫ হাজার টাকার বেশি দিতে পারেননি।
ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা আরও বলেন, কামরুল পরামর্শ না দিলে একজন কিশোরের পক্ষে আরেক কিশোর বন্ধুকে মিথ্যা কথা বলে ঢাকা থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। মুক্তিপণ আদায়ের চিন্তাও মাথায় আসার কথা নয়। ওই কিশোর সবকিছুই করেছে কামরুলের পরামর্শে। টাকার জন্যই কামরুল এ কাজ করেছেন। এ জন্য ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ২০ হাজার টাকা ওই কিশোরকে দিয়ে বাকি ৩০ হাজার টাকা নিজে রাখবেন, এমন পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
গত ২৮ আগস্ট নিহত নূর নবীর বন্ধু ১৬ বছর বয়সী কিশোরকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর সে আদালতে ওই দিনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সে বলে, বন্ধু নূর নবীকে ঢাকা থেকে ফেনীতে কামরুলের বাড়িতে জন্মদিন উদ্যাপনের কথা বলে নিয়ে যায় সে। পরে কামরুলসহ তারা চট্টগ্রাম আসে। মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় কামরুলসহ দুজন মিলে নূর নবীকে খুন করে।
গত ২৫ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকার একটি সড়কের পাশ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোর নূর নবীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথায় ও বুকে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। আগের দিন ২৪ আগস্ট নূর নবীর পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অজ্ঞাতনামা এক যুবক। মুঠোফোনে আর্থিক সেবার একটি নম্বরে ওই দিন পাঁচ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু অপহরণকারীরা সেই টাকা তুলতে দোকানে যায়নি। নূর নবী নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান হোসেন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
খুনের পর আবারও টাকা চান কামরুল
এদিকে গ্রেপ্তারের দুই দিন আগে গত বৃহস্পতিবার কামরুল নিহত নূর নবীর বড় ভাইকে ফোন করেন। ফোনে তিনি পরিচয় গোপন করে কামরুলের তথ্য দিতে পারবেন বলে জানান। এ জন্য তাঁকে ১০ হাজার টাকা দিতে বলেন। গ্রেপ্তার হলে বাকি ১০ হাজার টাকা দিতে বলেন। কিন্তু নূর নবীর পরিবার কোনো টাকা দেয়নি আর। গ্রেপ্তারের পর কামরুল পুলিশের কাছে এ তথ্য স্বীকার করেন বলে ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানান।
মামলার বাদী ও নিহত নূর নবীর বড় ভাই রমজান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নূর নবী ও ১৬ বছর বয়সী কিশোর দুজনই বন্ধু। সামান্য টাকার জন্য এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে খুন করত না। নির্মাণশ্রমিক কামরুলের পরামর্শে তাঁর ভাইকে হারাতে হয়েছে। আর কোনো কিশোর যাতে বিপথগামী না হয়, পরিবারকে হারাতে না হয় সন্তানকে। এ জন্য অপরাধীর ফাঁসি চান তিনি।