বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি। শুরুতে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করলেও পরে পুলিশের এক সদস্যের বাধার মুখে তিনি গণস্বাক্ষর বন্ধ রেখেছেন। এর মধ্যে মহিউদ্দিনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আরও কয়েকজন অবস্থান কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছেন।
মহিউদ্দিন রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এর আগে গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেন তিনি। গত মাসে রেলের টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর ঈদুল আজহার আগে ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অনশন শুরু করেন মহিউদ্দিন। ১০ জুলাই ঈদের দিনেও তিনি অবস্থানে ছিলেন।
মহিউদ্দিনের ছয় দফা দাবি হলো: টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহজ ডট কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করা ও হয়রানির ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া, যথোপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করা ও অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, যাত্রীচাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া, ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক-তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক নজরদারি ও শক্তিশালী তথ্য সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বাড়ানো এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
গত ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন বুক করার চেষ্টা করেন মহিউদ্দিন। কিন্ত মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা সংস্থা বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড (যাচাইকরণ কোড) দিয়ে তাঁর পিন কোড (গোপন কোড) ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। মহিউদ্দিন ট্রেনের কোনো আসন পাননি, এমনকি কেন টাকা নেওয়া হলো, সে বিষয়ে কোনো ডকুমেন্টও (রসিদ) তাঁকে দেওয়া হয়নি। সেদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাঁকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়৷ কিন্তু ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ মহিউদ্দিনের।
মহিউদ্দিন জানান, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো জবাব বা শুনানির জন্য ডাক আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে ৭ জুলাই থেকে তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন। অবস্থানের তৃতীয় দিনে ৯ জুলাই পুলিশ সদস্যরা তাঁকে বাধা দেন। তখন থেকে তিনি গণস্বাক্ষর বন্ধ রেখে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই শুধু অবস্থান কর্মসূচি করছেন। তবে প্রথম তিন দিনে মহিউদ্দিন শ খানেক মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান মহিউদ্দিন।
এদিকে মহিউদ্দিনের এই অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ মাহিন রুবেল ও কাজী আশিকুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের ছাত্রী জয়া মণ্ডল। তবে জয়া মণ্ডল শুধু দিনে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকছেন, অন্যরা থাকছেন সর্বক্ষণ। গত মঙ্গলবার কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে মহিউদ্দিনদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক জিএস ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী৷ এদিন মহিউদ্দিনরা রেলের কিছু কর্মকর্তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে দুর্নীতি ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানান।
মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমার দাবিগুলো যৌক্তিক, কিন্তু এগুলো পূরণ করা সম্ভব নয়৷ এ ছাড়া রেলের কয়েকজন কর্মকর্তা এসে আমার দাবিগুলো লিখে নিয়ে গেছেন। যদিও রেলের পক্ষ থেকে দাবির বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’
মহিউদ্দিনের কর্মসূটি ও দাবির বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদত আলী ও যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন) এ এম সালাহ উদ্দীনের মুঠোফোনে একাধিক কল করেও সাড়া মেলেনি।