মিয়া আরেফিকে আমি চিনি না: আদালতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান সারওয়ার্দী

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে আজ বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়া আরেফিকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি এ দাবি করেন।

লোহার খাঁচার আদলে তৈরি আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘মিয়া আরেফির সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই। আমি আরেফিকে চিনিও না। ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে কয়েকজন পরিচিত আহত হওয়ার খবর শুনে আমি সেখানে যাই। সেখানে বিএনপির নেতা ইশরাকের সঙ্গে দেখা হয়। পরে বিএনপি অফিসে গিয়ে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। বসার জন্য চেয়ার দিলে আমি সেখানে বসি।’

চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী আদালতকে আরও বলেন, ‘আমি কিন্তু সেখানে কোনো বক্তব্য দিইনি। মিয়া আরেফি নামের ওই ব্যক্তি যখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিষয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিতে থাকেন, তখন আমি এর প্রতিবাদ করি। মিয়া আরেফি এটা বলতে পারেন না।’

গত ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের কারণে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরপর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিয়া আরেফি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সেখানে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী উপস্থিত ছিলেন।

মিয়া আরেফিকে রোববার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন

পরদিন বিমানবন্দর থেকে মিয়া আরেফিকে আটক করে পুলিশ। ওই দিনই ‘মিথ্যা পরিচয়ে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের’ অভিযোগে মিয়া আরেফি, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক ব্যক্তি। মিয়া আরেফি বর্তমানে কারাগারে আছেন। আর গতকাল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

বুধবার তাঁকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাঁর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী

দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গাড়িতে করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। এর আড়াই ঘণ্টা পর তাঁকে হাজতখানা থেকে আদালতকক্ষে নেওয়া হয়। তখন তিনি আদালতকক্ষের বেঞ্চে বসেন। এ সময় ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় দায়ের করা অপর এক মামলায় রিমান্ড শুনানির জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আদালত কক্ষে হাজিরা করা হয়েছিল।

মির্জা আব্বাসের রিমান্ড শুনানি শেষ হলে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর মামলার রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। তখন হাসান সারওয়ার্দীকে লোহার খাঁচার আদলে তৈরি আসামির কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু। তিনি আদালতকে বলেন, ‘সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী জনৈক মিয়া আরেফিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে হাজির করেছেন। তাঁকে যা শেখানো হয়, তাই তিনি তোতা পাখির মতো আওড়ান। একটা গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে।’

পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন বাতিল করে জামিনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তাঁর আইনজীবীরা। তাঁরা আদালতকে বলেন, মিয়া আরেফি নামের জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর পরিচয় ছিল না। তিনি বিএনপি কার্যালয়ে বসে কোনো বক্তব্যও দেননি। এ পর্যায়ে লোহার খাঁচার আদলে তৈরি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আদালতের উদ্দেশ্যে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি কথা বলতে চাই।’ পরে আদালত অনুমতি দিলে তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করেন।

এ সময় লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী আদালতকে বলেন, ‘মিয়া আরেফি নামের কাউকে আমি চিনি না। সেদিন নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে আমার পরিচিত কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পেয়ে সেখানে যাই। কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে গিয়ে আহত কয়েকজনকে দেখতে পাই। পরে বিএনপি নেতা ইশরাকের সঙ্গে দেখা হয়। এরপরে বিএনপি অফিসে যাই। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরে চেয়ার দেওয়া হলে আমি বসি। আমি কোনো কথা বলিনি।’