লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে বিদ্যমান কৌশলগুলো পুনর্বিবেচনা ও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেছেন, সহিংসতা প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ে বিশেষায়িত ও অভিজ্ঞ দল গঠন প্রয়োজন।
লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নিরসনে ১৬ দিনের কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শারমীন এস মুরশিদ এসব কথা বলেন। আজ বুধবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপ অন উইমেন অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যান্ড জেন্ডার ইকুয়ালিটি এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশের সহযোগিতায় ১৬ দিনের কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর সহিংসতা প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন উন্নয়ন এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে একটি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘এই ১৬ দিনের কর্মসূচি অনেক প্রশ্ন তুলে ধরে, কিন্তু পর্যাপ্ত উত্তর দেয় না। বৈশ্বিক এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর ওপর সহিংসতার ক্রমবর্ধমান হার আমাদের কৌশল পুনর্মূল্যায়নের তাগিদ দেয়।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রায়ই কর্মী স্থানান্তর হওয়ায় কাজের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে প্রশিক্ষিত একজন ব্যক্তি হঠাৎ স্থানান্তরিত হলে দক্ষতার শূন্যতা তৈরি হয়। আমাদের এমন স্থিতিশীল ও বিশেষায়িত দল দরকার, যেখানে সমাজবিজ্ঞানী এবং লিঙ্গবিশেষজ্ঞরা গবেষণা পরিচালনা করতে ও নেতৃত্ব দিতে পারবেন।’
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, নারী অধিকারকর্মী, উন্নয়ন সহযোগী এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা নারীর ওপর সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর আইনি পদক্ষেপ, শক্তিশালী নীতি এবং নীতির সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার আইনি কাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০৯ সালের উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে স্বীকার করি। তবে বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, খসড়া যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইনটি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করবে। পাশাপাশি ২০১০ সালের পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা জরুরি।’
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস বলেন, ‘লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬ দিনের কর্মসূচির এই সময়টিকে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের প্রভাবক হিসেবে ব্যবহার করতে আহ্বান জানাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০১০ সংশোধন এবং কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সংলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, নারী ও মেয়েদের সুরক্ষার জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগই একমাত্র পথ। জনসমাগমস্থলে হয়রানির সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ও ধরন নির্ধারণ করা জরুরি। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে তাদের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি জাগাতে হবে। এর জন্য রাষ্ট্রের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব প্রকাশ কান্তি চৌধুরী। সংলাপে অংশ নেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিন পারভীন হক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এবং বি–স্ক্যানের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মুকলেসুর রহমান সরকার। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় এই ১৬ দিনের কর্মসূচি সারা দেশে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পালন করা হবে।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।