বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক এখনো ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে উদ্বিগ্ন স্বজনেরা গতকাল সোমবার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেছেন।
পরে স্বজনেরা দুটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেছেন, তাঁদের সন্তানেরা ভালো আছেন।
গত শুক্র, শনি ও রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাতজন সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে আসা হয়। তাঁরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেল। ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, নিরাপত্তাহীনতার কারণে এঁদের ডিবির হেফাজতে আনা হয়েছে।
এঁদের মধ্যে আরিফ সোহেল ছাড়া বাকি ছয় সমন্বয়ক রোববার রাতে এক ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করার কথা বলেন। এ খবর প্রকাশের পর রাতে অন্য সমন্বয়কের কয়েকজন ভিন্ন মত প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।
ডিবি হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের গতকাল দেখতে যান তাঁদের স্বজনেরা। পরে তাঁরা সময় টেলিভিশন ও একাত্তর টেলিভিশনকে প্রতিক্রিয়া জানান। এতে হাসনাত আবদুল্লার ভাই বলেন, হাসনাত বলেছে তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়নি। তাঁদের কোনো সমস্যা করে নাই, ভালো আছে।
নুসরাত তাবাসসুমের মা বলেছেন, ‘এখানে এসে স্বস্তি পেয়েছি। আমার মেয়ে যথেষ্ট ভালো আছে। আপ্যায়ন পেয়েছে। তাঁর সঙ্গে আমিও আপ্যায়ন পেয়েছি।’ নাহিদ ইসলামের মাও বলেন, নাহিদ ভালো আছে। একই কথা বলেছেন হেফাজতে থাকা আরও চার সমন্বয়কের স্বজনেরাও।
সাক্ষাতের পর এই স্বজনেরা ডিবি কার্যালয়ে দুপুরের খাবার খান, সে ভিডিও চিত্রও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন প্রচার করেছে।
এদিকে সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসের এক খবরে বলা হয়, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে বিবৃতি দিতে জোরজবরদস্তি করার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি গুজব।
গতকাল মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের প্রধান ফটকে হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের (সমন্বয়কদের) ডিবি হেফাজতে আনা হয়েছে। তাঁরা ভালো আছেন। রোববার রাতে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও এসে তাঁদের দেখে গেছেন। শিগগিরই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আমরা মনে করি, যদি কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, আমাদের কাছে আসেন, তাহলে আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তাঁদের দেখভাল করা। সেটাই আমরা করছি।’
এই শিক্ষার্থীদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতেও পরিবারের লোকজন ডিবিতে এসেছেন, দেখা করেছেন। আজও দেখা করেছেন, কথা বলেছেন, সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ওঁরা যে ভালো আছেন, সে জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন।’