শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে। জাজিরার এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকার ব্যাংক চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ সুপারের আদেশে তাঁকে থানা থেকে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে তিনি ওই থানার ওসির দায়িত্ব পরিদর্শকের (তদন্ত) কাছে হস্তান্তর করেছেন।
মোস্তাফিজুর রহমানকে থানা থেকে সরিয়ে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে সংযুক্ত করার তথ্যটি পুলিশ সুপার সাইফুল হক প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নাওডোবা এলাকার এক ব্যবসায়ী থানায় ডেকে নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের একটি অভিযোগ করেছেন। ওই ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাটি যাতে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা যায়, সে কারণে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসিকে ৭ জুন বদলি করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে গত ২১ মে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা খোয়া গেছে এমন অভিযোগ তুলে ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় ২৩ মে মামলা করেন শাহীন আলম। ওই মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর চোকদারের চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়।
এরপর ২ জুন আবু জাফর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওই থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে ওই ছিনতাই মামলার আসামির তাঁর চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাঁকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তাঁর নামে লিখে দেওয়া হবে। তবে এতে রাজি হননি আবু জাফর।
তখন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে (আবু জাফর) মারধর করেন। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তাঁর চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর। ওই চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়।
পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহমেদ শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে তিনি এ থানার দায়িত্ব হস্তান্তর করে শরীয়তপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চলে গেছেন।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। অফিশিয়াল প্রসেসের কারণে হয়তো তাঁর দায়িত্ব ছাড়তে এক দিন সময় লেগেছে। নাওডোবার এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কেন একজনকে বদলি করা হলো, এমন প্রশ্ন করলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নড়িয়া সার্কেল তাঁর কর্মস্থলে থাকবেন। তদন্তে অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণিত হলে তখন আমরা তাঁর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’