সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)

ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনের প্রার্থীদের বেশির ভাগের পেশাই ব্যবসা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) এ দুই স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বুধবার সুজন অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলন করে হলফনামার এসব তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরে।

সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

হলফনামার বিশ্লেষণে ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনে ২২২ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬৩ দশমিক ৫১ শতাংশের পেশা ব্যবসা। অন্যদের মধ্যে ১৫ শতাংশের বেশি গৃহিণী, ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি চাকরিজীবী, ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ কৃষিজীবী এবং ১ দশমিক ৮০ শতাংশ আইনজীবী।

ময়মনসিংহের পাঁচজন মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে ইকরামুল হক, এহতেসামুল হক ও শহিদুল ইসলাম ব্যবসায়ী এবং মো. রেজাউল হক ও সাদেকুল হক খান (মিল্কি) আইনজীবী।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর মধ্যে ৭৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর মধ্যে প্রায় ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী।

কুমিল্লা সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনে চারজন মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে মো. মনিরুল হক, নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম এবং তাহসীন বাহারের পেশা ব্যবসা। অন্যদিকে মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন চাকরিজীবী। সুজন বলছে, কুমিল্লায় ব্যবসায়ীর হার ২০২২ সালের নির্বাচনে ছিল ৬০। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা না বাড়লেও শতকরা হার ২০২২ সালের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

সুজন বলেছে, অন্যান্য নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। এ প্রবণতা নির্বাচনে অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষণ। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের আধিক্য এবং অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব হ্রাস পাওয়া ইতিবাচক নয় এবং তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যও মঙ্গলজনক নয়।

ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে তিন পদের প্রার্থীর মধ্যে ৪৮ শতাংশের বেশি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। মেয়রপ্রার্থীদের অর্ধেক স্বশিক্ষিত, অর্ধেক উচ্চশিক্ষিত। কুমিল্লায় তিনজনই উচ্চশিক্ষিত।

সুজন জানিয়েছে, ময়মনসিংহে সাতজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা বা হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।

ময়মনসিংহ সিটির প্রার্থীদের ৬৩ শতাংশের বেশি বছরে পাঁচ লাখ টাকার কম আয় করেন। অবশ্য ৪৭ জন প্রার্থী আয় উল্লেখ করেননি।

কুমিল্লার প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক বছরে সবচেয়ে বেশি, ৭২ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৩ টাকা, আয় করেন। এরপরে রয়েছেন তাহসীন বাহার, ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৩ টাকা। বাকি দুই প্রার্থীর আয় পাঁচ লাখ টাকার কম।

সুজন বলছে, আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রার্থীদের অনেকেই তা দেন না। বেশির ভাগই সনদ জমা দেন। ময়মনসিংহে পাঁচজন মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে ইকরামুল হক ও রেজাউল হক আয়কর বিবরণী দিয়েছেন। এই সিটি নির্বাচনের ২২২ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশের আয়কর প্রদানসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

কুমিল্লার উপনির্বাচনের চারজন মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম এবং তাহসীন বাহারের আয়কর প্রদানসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। বাকি দুজন শুধু সনদ দিয়েছেন।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আয়কর বিবরণী দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা অনেকেই মানেন না। এতে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কথা। জাতীয় নির্বাচনেও অনেকে আয়করের তথ্য দেননি। নির্বাচন কমিশন এগুলো খেয়াল করে না এবং তাদের মাথাব্যথা নেই।

নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক বলেন, বিষয়টি নির্ভর করে ক্ষমতাসীন দল, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও প্রার্থীদের ওপর।

স্থানীয় নির্বাচনে নির্দলীয় প্রতীকের বিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে স্থানীয়ভাবে যাঁরা কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন, কিন্তু জনপ্রিয়তা আছে বা ভালো মানুষ বলে পরিচিতি, তাঁরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এতে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ে। এবার নির্দলীয় প্রতীক দিলেও আওয়ামী লীগ কুমিল্লায় একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। এতে নির্দলীয় প্রতীকের যে সুফল, তা ব্যাহত হতে পারে। কারণ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দলীয় হয়ে গেছে। তাদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের আশঙ্কা রয়েছে।