হাইকোর্ট ভবন
হাইকোর্ট ভবন

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা

সহিদুরের জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি সোমবার

আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন চেম্বার আদালত। আজ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম শুনানির এ দিন ধার্য করেন।    

এর আগে ওই মামলায় ২০ নভেম্বর বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সহিদুর রহমানকে জামিন দেন। জামিনের পর গতকাল বুধবার দুপুরে সহিদুর রহমান কারামুক্তি পান। অন্যদিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদনটি গতকাল শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার আদালত আজ সকাল ১১টা ০৫ মিনিটে খাসকামরায় শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি হয়।  

চেম্বার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। সহিদুরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ এবং আইনজীবী এম এ মুনতাকিম।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মামলাটির বিচার ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জামিন আবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সহিদুরের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনটি করে। চেম্বার আদালত বলেন, ২৭ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনবেন।  

হাইকোর্ট শুনলেন, আদেশ রোববার

এদিকে সহিদুরকে হাইকোর্টের যে বেঞ্চ জামিন দিয়েছিলেন, সে বেঞ্চে আজ বিষয়টি ওঠে। মধ্যাহ্ন বিরতির পর আদালত রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। শুনানি নিয়ে আদালত আদেশের জন্য আগামী রোববার (২৬ নভেম্বর) দিন রেখেছেন।  
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও মো. সারওয়ার হোসেন। সহিদুরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম এ মুনতাকিম।

পরে আইনজীবী এম এ মুনতাকিম প্রথম আলোকে বলেন, সহিদুরের জামিন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে এলে মধ্যাহ্ন বিরতির পর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট দ্বৈত বেঞ্চ দুই পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। আগামী রোববার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছিল চেম্বার আদালতে। আদালত স্থগিতাদেশ না দিয়ে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২৭ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যমতে, ওই মামলায় এর আগে জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন সহিদুর। আবেদনটি খারিজ করে গত ১৯ জুলাই হাইকোর্ট আদেশ দেন। তথ্য গোপন করে একাধিক জামিনের আবেদন করায় তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে আপিল বিভাগে জামিনের আবেদন করেন সহিদুর। গত ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগ সহিদুরের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়ে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই দ্রুত বা সম্ভাব্য ছয় মাসের মধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেন। লিভ টু আপিল খারিজ হওয়ায় সহিদুরকে হাইকোর্ট যে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন, তা বহাল থাকে।

সহিদুরের আইনজীবী এম এ মুনতাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে দেওয়া আদেশে ওই টাকা জমা না দিলে নিম্ন আদালত সহিদুরের জামিন আবেদন গ্রহণ করবে না উল্লেখ করা হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে সহিদুরের করা লিভ টু আপিল খারিজ করে গত ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগ আদেশ দেন। ফলে ৫০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার আদেশ বহাল থাকে। আদেশ মেনে ইতিমধ্যে সহিদুর ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। এরপর নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে বিফল হয়ে হাইকোর্টে ওই আবেদন করেন। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি।’

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এই হত্যায় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর ও তাঁর ভাইদের নাম বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এ মামলায় আমানুর ছাড়াও তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাঁকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পাসহ ১৪ আসামি রয়েছেন।

সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী

প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে গিয়ে আজ দুপুরে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সাক্ষাৎ শেষে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলায় আসামির জামিন নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, আমি দেখেছি। আমি মনে করি, এটার ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’