‘বাবার খবর শুনে ছুটে যাই, দেখি রক্ত আর রক্ত’

বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত কারখানা
ছবি: সৌরভ দাশ

‘বাবাকে দুপুরে ভাত দিয়েছি আমি। এরপর মামার ফোন আসে। আসরের নামাজের আগে বাবা বের হয়। এরপর একটা বিকট শব্দ শুনি আমরা। কিছুক্ষণ পর শুনি বাবা আহত। সবাই ছুটে যাই। কিন্তু দেখি রক্ত আর রক্ত। এ খবর শুনে মা অজ্ঞান হয়ে পড়েন।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় অক্সিজেন কারখানায় দুর্ঘটনায় নিহত হন শামসুল আলম। তাঁর ছোট মেয়ে মালেকা সিদ্দিকা এসব কথা বলেন।  

শামসুল আলমের স্ত্রী রেহেনা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কেউ একজন ফোন করে স্বামী শামসুল আলমের দুর্ঘটনার খবরটি দিয়েছিলেন। এরপর দৌড়ে সবাই কদমরসুল বাজারে ছুটে যান।

৬৫ বছরের শামসুল আলমের মাথা থেঁতলে গিয়েছিল। একটু একটু জ্ঞান ছিল তখনো। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

বিস্ফোরণে ভেঙেচুরে গেছে সব

গতকাল শনিবার বিকেলে শামসুল আলম চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল বাজারের একটা লাকড়ির দোকানের ভেতরে বসেছিলেন। সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কারখানা ওখান থেকে আধা কিলোমিটার দূরে। ওখান থেকে লোহার টুকরা উড়ে এসে টিনের চালা ভেদ করে শামসুলের মাথায় লাগে।

গতকাল রাত সাড়ে আটটায় ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে জাহানবাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকাবহ পরিবেশ। স্বজনেরা কাঁদছেন। রেহানা আফসোস করে বলেন, ‘সাড়ে তিনটার দিকে আমার ভাই ফোন করে তাঁকে (শামসুল আলম)। একটু দোকানে যেতে বলে। চারটার দিকে তিনি বের হন। এর কিছুক্ষণ পর এই খবর আসে। সব শেষ।’

শামসুল আলমরা তিন ভাই। তিনি সবার বড়। ছোট ভাই মুছা আল কাদেরি বলেন, ‘খবরটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।  কারণ, দোকান থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কারখানা। ওখান থেকে কীভাবে পাত উড়ে এল। এমন ঘটনা বিশ্বাস করতে পারছি না।’
শামসুল আলম ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। সময় পেলে শ্যালক ইউছুপের লাকড়ির দোকানে বসতেন।

সেখানে সময় কাটাতেন। শামসুলের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে আগেই মারা গেছেন। ছোট মেয়ে কয় দিন আগে বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।

জাহানাবাদ থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। বিস্ফোরণে ওই এলাকাও কেঁপে ওঠে। বাড়ি থেকে স্বজনেরা কদমরসুল এলাকায় দোকানে যাওয়ার পর শামসুল আলমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত ঘোষণা করা হয়। এখন স্বজনেরা আছেন শামসুলের লাশের অপেক্ষায়।