চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেছেন, শাটল ট্রেন দুর্ঘটনাকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে জামায়াত শিবির ও বিএনপির প্ররোচনা ছিল। বিক্ষোভে তাদের ‘অ্যাজেন্ডা’ ঢুকে পড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টায় ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এলাকা পরিদর্শনে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত নয়টার দিকে শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে যাওয়ার সময় হেলে পড়া একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৯ শিক্ষার্থী আহত হন। আহত শিক্ষার্থীদের ১৬ জনকে ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এঁদের মধ্যে তিনজন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। অবশ্য উপাচার্য শিরীণ আখতার এ বাসভবনে থাকেন না। এ ছাড়া অন্তত ২৪টি বাস, ১টি মোটরসাইকেল, ১৫টি প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর করেন তাঁরা।
একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ক্লাবেও হামলা চালান। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখান। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা শিক্ষক ক্লাবের একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের গাড়ি ও শিক্ষক ক্লাবের আসবাবও ভাঙচুর করেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন। রাত একটায় মূল ফটক আটকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ বিক্ষোভ চলাকালেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়ালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যান। পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়।
রাত দেড়টায় পুলিশ এসে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এরপর প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার শিক্ষক ক্লাব থেকে বের হয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে। পরিবহনের কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। শিক্ষক ক্লাবে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। রেলের বগিতে আগুন জ্বালানো হয়েছে, পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। আমার সাধারণ ছাত্রছাত্রী ভাইবোনদের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখানে নিশ্চয়ই জননেত্রী শেখ হাসিনাবিরোধী চক্র জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অ্যাজেন্ডা ছিল। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে তারা।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর বলেন, ‘আপনাদের যেকোনো দাবিদাওয়া থাকতে পারে। আমাদের উপাচার্য ও অনেক শিক্ষক বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেলে অবস্থান করছেন। যাঁদের সিটি স্ক্যানের প্রয়োজন হচ্ছে, তাঁদের সিটিস্ক্যান করা হচ্ছে। যাঁদের ওষুধ দরকার, তাঁদের ওষুধ কিনে দেওয়া হচ্ছে।’
প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার আরও বলেন, ‘যাঁরা আহত হয়েছেন, আমরা তাঁদের জন্য দুঃখিত, মর্মাহত। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ছেলেমেয়েরা যাতে ছাদে না ওঠেন, সে জন্য রেলের বগি বাড়ানোর জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব।’
রাত দুইটার দিকে ভাঙচুরের এসব ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ক্যাম্পাসে আসেন উপাচার্য শিরীণ আখতার, সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক আবদুল্লাহ মামুন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সজীব কুমার ঘোষ প্রমুখ। ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে এ ঘটনার পর আজ শুক্রবার সকালে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত ছিল। তবে দুর্ঘটনার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে শাটল চলাচল। আজ সকালেও কোনো ট্রেন নগরের বটতলী থেকে ছেড়ে যায়নি। গতকাল রাত সাড়ে নয়টায় যে ট্রেনটি ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা, সেটি এখনো ক্যাম্পাসে রয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারকে লাঞ্ছিত করেছেন। এরপর নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা স্টেশনে ট্রেন রেখেই চলে এসেছিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আগের নিয়মে ট্রেন চলবে।