দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার কাজ করছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন
ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশে উন্নয়নের অদম্য গতিকে অব্যাহত রাখতে চায়। এ জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে একটি সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে তাঁর সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার সকালে পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ের চামেলি হল থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জানি, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি দেশের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।’

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত থাকুক।’

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিতের পাশাপাশি জনসাধারণের, বিশেষ করে তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক খরস্রোতা বড় বড় নদী পাড়ি দিয়ে জীবিকা ও চিকিৎসার জন্য তাঁদের রাজধানীতে আসতে হতো।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ছিয়নব্বই সালে বরিশালের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের জন্য শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতু নির্মাণ করে দিই। কীর্তনখোলার ওপর ব্রিজ নির্মাণের কাজ হাতে নিই।’

শেখ হাসিনা বলেন, গাবখান ব্রিজও তাঁর সরকারেই করা। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে একের পর এক সেতু তাঁর সরকার করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের ফলে ঢাকার সঙ্গে পিরোজপুরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ পিরোজপুরের তাজা পেয়ারা ও আমড়া রাজধানীতে বসেই পাবে। এ অঞ্চলের শীতলপাটিও বিখ্যাত। জেলার বাসিন্দারা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করতে পারে, যা জেলা ও অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ব্যাপক অবদান রাখবে।

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৯৪ দশমিক ০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৪৯৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করে।

চীন সরকার সেতুটির জন্য প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

সেতুটি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মোংলা সমুদ্রবন্দর ও দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তৃতা করেন।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী অনুষ্ঠানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।

প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

উদ্বোধন উপলক্ষে সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ে দুটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়।পশ্চিম পাড়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও পূর্ব পাড়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে প্রকল্প এলাকার জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তাঁরা পায়রা বন্দরের উন্নয়ন করবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তাঁর সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে আমরা আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন করছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, গাজীপুর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার র‍্যাপিড বাস ট্রানজিট, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল, ১০ লেনের টঙ্গী সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতি আরও গতি পাবে।