বিশ্বব্যাপী অ্যালার্জিজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে গত ২৩ জুন থেকে ২৯ জুন পালিত হয় ‘বিশ্ব অ্যালার্জি সপ্তাহ ২০২৪’। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অ্যালার্জি সম্পর্কে জানুন, সুস্থ থাকুন’।
এই উপলক্ষে গত শনিবার (২৯ জুন) এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের উদ্যোগে এবং বিলটিন ও লুমনার সৌজন্যে রাজধানীর জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় গোলটেবিল আলোচনা। অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচার হয় প্রথম আলো ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইএনটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাকারিয়া সরকার। এতে অংশ নেন ল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড ভয়েস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক (ইএনটি) ডা. কামরুল হাসান তরফদার, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক ও ইএনটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম খোরশেদ মজুমদার, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইএনটির হেড-নেক সার্জারি ইউনিট-১-এর প্রধান ও অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আশেকুর রহমান ভূঞা, অটোলজি ইউনিট-২-এর প্রধান ও অধ্যাপক ডা. মো. আবুল হোসেন, হেড-নেক সার্জারি ইউনিট-২-এর প্রধান ও অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, রাইনোলজি ইউনিট-২-এর প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. কে এম মামুন মোর্শেদ, অডিওলজি ও ভেস্টিবুলার সায়েন্স বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খবীর উদ্দিন পাটোয়ারী, হেড নেক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হানিফ এবং এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার মো. রুবায়েদুল হাসান লস্কর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক ডা. মো. জাকারিয়া সরকার বলেন, ‘যেকোনো বহিঃশত্রু বা অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে শরীর যে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা-ই অ্যালার্জি। সহজ ভাষায়, এটি আমাদের ইমিউন সিস্টেমের (রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা) একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। একে বলে অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন।’
কী কারণে আমরা অ্যালার্জির সম্মুখীন হই? এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘অ্যালার্জি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ‘জেনেটিক ফ্যাক্টর’। অর্থাৎ পরিবারে মা-বাবার একজনের থাকলে সন্তানের হওয়ার আশঙ্কা ২০ শতাংশ আর দুজনের থাকলে ৪৭-৫০ শতাংশ। এ ছাড়া এটি ঋতুভেদে এবং অঞ্চল বা ভৌগোলিকভাবে হতে পারে।
অ্যালার্জির সঠিক চিকিৎসা না করালে কী কী ক্ষতি হতে পারে—এ বিষয়ে ডা. মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘অ্যালার্জির প্রধান লক্ষণ হলো হাঁচি, কাশি, চুলকানি, গায়ের চামড়া ফুলে যাওয়া, লাল হওয়া ও জ্বালাপোড়া ইত্যাদি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিয়ে অবহেলা করলে বড় ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা থাকে। এটি রূপ নিতে পারে অ্যাজমাটিক, ন্যাজাল পলিপোসিস বা নাক বন্ধ ও মাংস বৃদ্ধির মতো সমস্যায়। সেখান থেকে সাইনোসাইটিসও হতে পারে।
অ্যালার্জি ছড়ানোর উৎসকে দূর করার ব্যাপারে পরামর্শ দেন ডা. কে এম মামুন মোর্শেদ। তিনি বলেন, ‘রাইনাইটিস অ্যালার্জির অন্যতম কারণ হচ্ছে হাউস ডাস্ট, যা সাধারণত ৮৭ শতাংশ অ্যালার্জেন ছড়ায়। নিয়মিত ঘর পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে এ ধরনের অ্যালার্জেন থেকে আমরা সুরক্ষা পেতে পারি। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের ঘরে কার্পেটবিহীন মেঝে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সেই সঙ্গে হেপা ফিল্টারসহ ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করলে অ্যালার্জি থেকে বেঁচে থাকা যাবে।
চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যালার্জি থেকে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়? সঞ্চালকের এ প্রশ্নের উত্তরে ডা. মুহাম্মদ আশেকুর রহমান ভূঞা বলেন, ‘দুই ধরনের অ্যালার্জি রয়েছে। একটি পেরিনিয়েল বা সারা বছর লেগে থাকা, অন্যটি সিজনাল বা ঋতুভেদে হওয়া। চিকিৎসার প্রথম ধাপ, অ্যালার্জেনের কারণ এবং উৎসগুলোকে ধ্বংস করা। দ্বিতীয়ত হচ্ছে অ্যান্টিহিস্টামিন চিকিৎসা। কারণ অ্যালার্জেন শরীরে ঢুকে মাস্টসেল ভেঙে দেয়। এতে প্রচুর হিস্টামিন রিলিজ হয়। তাই অ্যান্টিহিস্টামিন এ ধরনের রিলিজ বন্ধ করে। সৌভাগ্যবশত এসকেএফের বিলটিন একটি ভালো মানের অ্যান্টিহিস্টামিন। তৃতীয়ত, স্টেরয়েড, যা ন্যাজাল স্প্রের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ অ্যালার্জির প্রভাবের ওপর নির্ভর করবে এর চিকিৎসাপদ্ধতি। এর সঙ্গে সঞ্চালক যুক্ত করেন, ‘ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রোগীদের একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়ে দিতে হবে। যা আমাদের চিকিৎসকদের মৌলিক দায়িত্ব।’
অ্যালার্জির মতো রোগ থেকে কি সত্যি মুক্তি পাওয়া যায়? এ বিষয়ে ডা. মো. খবীর উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘অবশ্যই। দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনলেই তা সম্ভব। যেমন যেসব পোশাক ও বিছানার চাদরে ধুলা-বালি আটকায়, সেগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। যে খাবারে অ্যালার্জেন বেড়ে যায়, সেগুলো বাদ দিতে হবে। তবে রোগীরা সহজে ভালো হতে নানা কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসরণ করে, যা অমঙ্গল ডেকে আনে। তাই সচেতন হতে হবে।’
অ্যালার্জির সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট বিষয়ে ডা. এস এম খোরশেদ মজুমদার বলেন, ‘নাক-কান-গলাবিষয়ক যে অ্যালার্জি হবে সেটার চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের কাছ থেকেই নিতে হবে। আর রোগীরা মনোযোগ দিয়ে চিকিৎসকের কথা শুনবেন, চিকিৎসকরাও সময় নিয়ে রোগীকে বলবেন। এখানে দায়িত্বটা উভয় পক্ষের। তাই অ্যালার্জির ধরন সার্জারি পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।’
অ্যালার্জির নিত্যনতুন চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. কামরুল হাসান তরফদার বলেন, ‘এটার জন্য ভ্যাকসিন ও থেরাপি আছে। ভ্যাকসিন অ্যালার্জেনকে শরীরের সংস্পর্শে আসার আগেই প্রতিরোধ করে আর থেরাপি এটাকে প্রশমিত করে। সুতরাং চিকিৎসাপদ্ধতি অনেক আধুনিক হয়েছে। তাই অ্যালার্জি নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’
গোলটেবিল আলোচনায় শুভেচ্ছা বক্তব্যে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার মো. রুবায়েদুল হাসান লস্কর বলেন, ‘সচেতনভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে অ্যালার্জি থেকে সুস্থ থাকা যায়—এ বার্তাটিই সবাইকে দেওয়ার জন্য আমরা এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছি। পাশাপাশি বলতে চাই, অ্যালার্জি নিরাময়ে আমাদের সাশ্রয়ী ও কার্যকরী ওষুধ বিলটিন ও লুমনা খুব উপকারী বলে চিকিৎসক এবং ব্যবহারকারীরা বলেছেন। এ আয়োজনে উপস্থিত সবাইকে এসকেএফের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।’