পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যোগ মুখে মুখেই রয়ে গেছে। গত মার্চ থেকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, তাঁকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বললেন, আরাভ খানকে দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে। গত ২৫ মার্চও প্রায় একই কথা বলেছিলেন আইজিপি।
এরই মধ্যে গত মে মাসে অস্ত্র আইনের এক মামলায় আরাভকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি আরাভ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পালিয়ে থাকা আরাভের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে রেড নোটিশ জারি করেছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। সংস্থাটির রেড নোটিশের তালিকায় আরাভ খান ৬৩তম বাংলাদেশি।
পুলিশ কর্মকর্তা মামুন এমরান খানকে খুনের পর আরাভ খান ভারতে পালিয়ে যান। পরে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি দুবাইয়ে চলে যান। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সেখানে অবস্থান করছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আরাভ খানকে দুবাই থেকে দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করার পাশাপাশি কূটনৈতিক চ্যানেলে এগোচ্ছে পুলিশ।’ আইজিপির আশা, আরাভ খানকে ফেরত আনতে সক্ষম হবেন।
এর আগে গত ২৫ মার্চ রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেছিলেন, পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান খুনের মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
আরাভ খানকে দুবাই থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করার পাশাপাশি কূটনৈতিক চ্যানেলে এগোচ্ছে পুলিশ।চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, আইজিপি
পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খান ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তাঁর আধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে ঢাকার বনানী থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পলাতক রবিউল ওরফে আরাভসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
ঢাকায় পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মামুন এমরান খানকে খুনের পর আরাভ খান ভারতে পালিয়ে যান। পরে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি দুবাইয়ে চলে যান। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। গত ১৫ মার্চ দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে জমকালো অনুষ্ঠানে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি সোনার দোকানের উদ্বোধন করেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদনজগতের অনেক তারকাকে হাজির করে আলোচনায় আসেন আরাভ। এরপর তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের কথা জানানো হয়।
ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নোটিশে আরাভ খানের নাম লেখা হয়েছে রবিউল ইসলাম। জাতীয়তা দেখানো হয়েছে বাংলাদেশি। খুনের দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে এই নোটিশ বলে জানানো হয়। আরাভ খান জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছিলেন ‘রবিউল ইসলাম’ নামেই। তাঁর বাবার নাম মতিউর রহমান। বয়স এখন ৩৫ বছর ৭ মাস। সেখানে আরাভ খান স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা রয়েছে বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলায়। তবে জানা গেছে, ঠিকানাটি তাঁর নানা বাড়ির এলাকা।
গত ৯ মে ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ অস্ত্র মামলায় আরাভ খানের ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন। আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন রবিউল ইসলাম। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করে। ওই বছরের ১০ মে অভিযোগ গঠন করা হয়। একই বছরের ২৪ জুন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন রবিউল। তবে আদালতে হাজির না হওয়ায় ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি আদালত তাঁর জামিন বাতিল করেন। পলাতক আসামি হিসেবেই আরাভ খানের বিরুদ্ধে সাজার রায় ঘোষণা করেন আদালত।
দেশ-বিদেশে আরাভ খানের অপরাধলব্ধ আয়ের উৎস খুঁজতে অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি সূত্র জানায়, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম স্কোয়াডের মানি লন্ডারিং শাখা ইতিমধ্যে দুবাইয়ে আরাভ খানের অর্থ-সম্পদের তথ্য চেয়ে সে দেশের সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল স্কোয়াডের বিশেষ পুলিশ সুপার বাছির উদ্দিন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আরাভ খানের দেশে অর্থ–সম্পদের তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শেষের দিকে। দুবাই থেকে তথ্য পাওয়া গেলে তার মোট অর্থ-সম্পদের পরিমাণ জানা যাবে। তখন অর্থ পাচারের তথ্যও জানা যাবে।