কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহত ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় প্রকাশ, গণগ্রেপ্তার বন্ধ, সহিংসতা, হত্যার স্বচ্ছ তদন্তসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়। নাগরিক সংগঠন সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সংকট এখনো নিরসন হয়নি। শিক্ষার্থীরা হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত নয়—সরকারের পক্ষ থেকে এমনটা উল্লেখ করা হলেও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ (নির্দিষ্ট এলাকা অবরুদ্ধ করে অভিযান) দিয়ে গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। ফলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৯ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীতে ২৪৩টি মামলা হয়েছে। সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সুজনের বিবৃতিতে সরকারের প্রতি ৯ দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো:
জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করা এবং তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া; সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা; নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহত চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া; গায়েবি মামলা ও ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার বন্ধ করা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করা ও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পক্ষপাতদুষ্ট মামলা প্রত্যাহার ও আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা করা থেকে বিরত থাকা, ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া, সাধারণ নাগরিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন থেকে দূরে থাকা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করা থেকে বিরত থাকা; যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে তুলে নিয়ে পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) বা থানায় হাজির করা থেকে বিরত থাকা; ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গনসহ জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কারফিউ তুলে নিয়ে এবং ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা, ক্যাম্পাসে গণরুম ও ‘গেস্টরুম কালচার’ ও র্যাগিং বন্ধ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া, তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে সব ক্যাম্পাসে নিয়মিত ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা; এবং ভোটাধিকার থেকে শুরু করে জনগণের অন্যান্য নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।