নড়াইলের লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে যাঁরা রুখে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মুসলমান তরুণ-যুবাও রয়েছেন। এটি আশার কথা, আস্থার কথা।
২০০২ সালে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার ভারতের গুজরাটের একটি গ্রামের অবস্থা নিজের চোখে দেখতে এসেছিলেন নিউইয়র্ক টাইমস–এর একজন সাংবাদিক। দুই দিন আগের রাতে পরিকল্পিত হামলা হয়, তাতে সে গ্রামের প্রতিটি ঘর আগুনে পুড়ে যায়। বেশ কয়েকজন, তাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে, নিহত হয়। সাংবাদিক ভদ্রলোক যখন সেখানে পৌঁছান, আগুনের হলকা তখনো নিবু নিবু জ্বলছে। গ্রামবাসী যাঁরা বেঁচে যায় তারা সবাই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।
সে পোড়া গ্রাম দেখতে পাশের দুই-তিন গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় করেছে, কারও চোখে বিস্ময়, কারও চোখে কৌতুক। বিদেশি সাংবাদিক প্রতিবেশী গ্রামের একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, এমন একটা ঘটনা ঘটল, আপনারা কেউ থামাতে এগিয়ে এলেন না? উত্তরে জানানো হলো, আমরা জানতাম না, আমরা কিছুই দেখিনি। সন্তুষ্ট হলেন না সাংবাদিক, এটা কী করে হয়, পুরো একটা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হলো, ভীতসন্ত্রস্ত্র নারী-পুরুষ চেঁচিয়ে সাহায্য চেয়েছে। আপনারা কেউ কিচ্ছু শুনলেন না?
সে প্রশ্নের সহজ উত্তর, রাতে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, কেউ কিছু দেখিনি, কিছু শুনিনি।
সাম্প্রদায়িক সহিসংতার ব্যাপারে ভারত বা বাংলাদেশে তেমন কোনো তফাত নেই। সংখ্যালঘু মানেই দুর্বল, অসহায়। দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী, মুখে বন্ধু অথচ অপেক্ষায় রয়েছে সংখ্যালঘুর ভিটাবাড়ি হাতানোর।
পুলিশের কাছে গিয়ে তেমন কোনো লাভ নেই, তারা বখরার অপেক্ষায় থাকে। নেতার কাছে গিয়েও তেমন কোনো লাভ নেই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর দলের লোকেরাই সবার আগে কাটারি হাতে। মুখে তিনি দাঙ্গার বিরুদ্ধে, অভিযোগের মুখে পড়লে সর্বদা তাঁর এক রা, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
নড়াইলের লোহাগড়ার সাহাপাড়ায় মহানবী (সা.)–কে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলে যে হামলা হয়, তাতেও এ অবস্থার ব্যতিক্রম দেখা গেল না। হামলাকারীদের অনেকেই একই গ্রাম বা প্রতিবেশী গ্রামের। ভুক্তভোগী এক যুবক জানিয়েছেন, আক্রমণকারীদের অনেককেই তিনি চেনেন। এসব চেনা লোকদেরই অচেনা মনে হয়েছে।
দা-লাঠি হাতে হামলাকারীদের যুক্তি ছিল, তোরা আমাদের দেশে থাকবি, আবার আমাদের নবীর নামে কটূক্তি করবি। অর্থাৎ সংখ্যালঘুরা আইনত এই দেশের নাগরিক হলে কী হবে, তারা এই দেশের বৈধ বাসিন্দা নয়। ফলে তাদের পেটানো মোটেই অন্যায় কিছু নয়। এরা সবাই যে ধর্ম রক্ষায় কোমর বেঁধে নেমেছে, তা–ও নয়। নড়াইলের ঘটনার সময়ই হামলাকারীরা ঘরে ঘরে গিয়ে কড়া নেড়ে বলেছে, টাকা দে, না হলে বাড়ি পুড়িয়ে দেব।
সাম্প্রদায়িকতা যখন একটি মতবাদ বা আইডিওলজিতে পরিণত হয়, তার পরিণতি হয় সহিংস দাঙ্গায়। এই মতবাদের কেন্দ্রে থাকে এই ভাবনা যে সংখ্যাগুরুর স্বার্থ ও অধিকার সংখ্যালঘুর তুলনায় অধিক ন্যায্য। হাজার বছর এক দেশে পাশাপাশি বসবাস করার পরও সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর চোখে আলাদা, অবৈধ ও কম গুণসম্পন্ন। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের অথবা নেটিভ ইন্ডিয়ানদের কথা ভাবুন। শ্বেতকায় সংখ্যাগুরু এদের কখনোই তাদের সমকক্ষ বা সম-অধিকারসম্পন্ন ভাবেনি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ আইডিওলজির এটাই মোদ্দা কথা।
স্পষ্টতই সম্প্রদায় গঠনে ধর্ম একটি প্রধান উপাদান, অন্তর্গত সব ভিন্নতা সত্ত্বেও ধর্মকে ঘিরে একই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের মধ্যে একধরনের ঐক্য গড়ে ওঠে। তবে ধর্ম শুধু একটি অনুঘটকমাত্র, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ অর্জনে তা একটি সেতুমাত্র। ভারতের দিকে তাকান।
মৌলিক চাহিদার হিসেবে হিন্দু ও মুসলমানের সংকট অভিন্ন। দারিদ্র্য, বৈষম্য, অনুন্নয়ন, পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা, দুর্নীতি অথবা আইনের সমপ্রয়োগ—এগুলোর প্রতিটি প্রশ্নে হিন্দু-মুসলমান কমবেশি সমানভাবে আক্রান্ত। অথচ রাজনৈতিক ফায়দা লাভের বিবেচনায় সংখ্যাগুরু তুলনামূলকভাবে কম ক্ষমতাবান সংখ্যালঘুকে তার প্রতিপক্ষ প্রমাণে ব্যস্ত। সেখানে চলতি ক্ষমতাসীন মহল হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদকে যেভাবে নিজের ক্ষমতা দখলের তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করছে, তা থেকেই স্পষ্ট মুসলমান পেটালে তারা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়। প্রমাণ হিসেবে গুজরাটের দাঙ্গার কথা ভাবুন।
২০০২ সালে গোধরার ট্রেন হামলায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের হতাহতের ঘটনার পর সারা গুজরাটে রাজ্য সরকারের অভিভাবকত্বে মুসলমানবিরোধী যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, তা প্রায় দুই মাস স্থায়ী হয়। গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, যা ঘটেছে, তা হিন্দুদের ওপর মুসলিম হামলার প্রতিক্রিয়ামাত্র। তিনি নিহত মুসলমানদের নিয়ে তাচ্ছিল্যও করেছিলেন। তাঁর সে কথায় চারদিকে ছি ছি রব উঠেছিল বটে, কিন্তু তাতে কি, সে বছর ডিসেম্বরের রাজ্য নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন। এক যুগ যেতে না যেতেই তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা একটি নিয়মিত অভিজ্ঞতা বটে, তবে হিন্দুবিদ্বেষ শাসকগোষ্ঠীর হাতে একটি পরিকল্পিত আইডিওলজিতে পরিণত হয়নি। হিন্দুধর্মাবলম্বীর প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে, অসহিষ্ণুতা রয়েছে, উপেক্ষা রয়েছে, কিন্তু তাকে শত্রু বানানোর কোনো পরিকল্পিত উদ্যোগ নেই। এর একটা কারণ, বাংলাদেশে হিন্দুধর্মাবলম্বী অথবা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এত দুর্বল, এত নিঃস্ব যে তাকে শত্রু ভাবা যায় না। যাদের আর্থিক-সামাজিক সক্ষমতা রয়েছে, তাদের অধিকাংশই তো ইতিমধ্যে দেশত্যাগ করেছে। এখনো যারা মুখে কাপড় গুঁজে পড়ে আছে, তাদের বড়জোর করুণা করা যায়।
এ কথার অর্থ এই নয় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর ধর্মকে একটি ইস্যু বানানোর কোনো চেষ্টা নেই। দেশে সারা বছর কোথাও না কোথাও কোনো হিন্দুধর্মবলম্বীর বিরুদ্ধে মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি অথবা ইসলামকে অবমাননার অভিযোগ ওঠে। এটি এখন প্রমাণিত যে ফেসবুকে কোনো হিন্দুধর্মাবলম্বীর নামে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে দুর্বলের সম্পত্তি হাতানোসহ নানা অসৎ উদ্দেশ্য পূরণের প্রতিযোগিতা চলে। অন্যদিকে সীমিত আকারে হলেও ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির চেষ্টা হয়। এখন বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো বেশ কোণঠাসা, মধ্যমঞ্চে ফিরে আসতে তাদের কোনো না কোনো একটা বাহানা চাই।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কখনো বাড়ে, কখনো কমে, কিন্তু কখনোই বন্ধ হয় না। আমাদের দেশে এ হামলার কোনো সরকারি হিসাব নেই, ফলে আস্থার সঙ্গে সংখ্যাওয়ারি হিসাব দেওয়া কঠিন। সংখ্যালঘুরা নিজেরা একটা রেজিস্ট্রি রক্ষা করে কিন্তু তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সে জন্য বাধ্য হয়ে নির্ভর করতে হয় বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা বা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওপর। তারা প্রায় সবাই বলেছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা ভালো নয়।
সে রকম একটি বিদেশি মানবাধিকার সংস্থার নাম মাইনরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল। এরা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এদের বক্তব্য, স্বাধীনতার পর দেশটি যেখানে নিজের ধর্মনিরপেক্ষ শাসনতন্ত্রের জন্য গর্ব বোধ করত, এখন সেখানে ক্রমশ ‘ধর্মীয় জাতীয়তা’ আসন গেড়ে বসছে।
এর ফলে দেশের সংখ্যালঘুরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছে। এই সংস্থার মতে, ২০১৩ সালের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে, তার অন্যতম কারণ হলো সমাজের অপরিবর্তিত গঠনগত চরিত্র। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অর্থনৈতিক বৈষম্যের সম্মুখীন, রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা এবং সামাজিকভাবে পূর্ব সংস্কারপ্রসূত মনোভাবের শিকার।
সংস্থাটি বলেছে, এই অবস্থা বদলাতে হলে শুধু আইনের শাসন জোরদার করলেই হবে না, নাগরিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন চাই। তেমন পরিবর্তন আনার জন্য চাই এমন রাজনৈতিক ও সামাজিক আবহ প্রতিষ্ঠা, যেখানে নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা শুধু সংরক্ষিত হবে তা–ই নয়, এই স্বাধীনতা রক্ষার কাজকে সচেতনভাবে উৎসাহিত করা হবে।
সংখ্যালঘু মানে শুধু হিন্দু বা বৌদ্ধধর্মভুক্ত জনগোষ্ঠী নয়। যারা রাজনৈতিক বা অন্য যেকোনো প্রশ্নে ভিন্নমত পোষণ করে, তারাও সংখ্যালঘু। আজকের বাংলাদেশে সব ধরনের সংখ্যালঘুই ক্রমাগত হামলার শিকার। এর একটা কারণ আইনের শাসনের দুর্বলতা।
ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট নামের একটি বেসরকারি সংস্থা বিশ্বের দেশগুলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কতটা এগিয়েছে বা পিছিয়েছে, তা বোঝার জন্য প্রতিবছর একটি ‘রুল অব ল ইনডেক্স’ প্রকাশ করে থাকে। ওয়াশিংটনভিত্তিক এই সংস্থার বিবেচনায়, ২০২০ সালের হিসাবে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৫, যা তার আগের বছরের তুলনায় দুই ঘর পেছনে।
২০২১ সালের প্রতিবেদনে এই অবস্থান আরও নেমে এসে দাঁড়ায় ১২৪-এ। তুলনামূলক চিত্রটি বোঝার জন্য জানাই, ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আইনের শাসনের বৈশ্বিক সূচকে প্রতিবেশী নেপালের স্থান ৭০, ভারতের স্থান ৭৯ ও পাকিস্তানের স্থান ১৩০।
সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণের প্রশ্নে বাংলাদেশে কোনো উন্নতি হয়নি, সে কথা মোটেই সত্য নয়। সংখ্যালঘুদের প্রতি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক আচরণে পরিবর্তন এসেছে, সংখ্যালঘুদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষণীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নাগরিক দৃষ্টিভঙ্গির খুব পরিবর্তন হয়েছে, এ কথা বোধ হয় বলা যাবে না। উদাহরণ হিসেবে বলি, শিক্ষাক্ষেত্রে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সাফল্য লক্ষণীয়, তাতে অনেকের আপত্তি।
দায়িত্বপূর্ণ পদে কোনো হিন্দুধর্মাবলম্বীকে দেখলেই এদের কারও কারও বায়ু চড়ে যায়। বাংলাদেশে যখন প্রথমবারের মতো একজন সংখ্যালঘু প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান, একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল লিখিতভাবে তার প্রতিবাদ করেছিল। টেক্সট বুক বোর্ডের প্রধান হিন্দুধর্মাবলম্বী করা হবে কেন, এমন প্রশ্নও তারা তুলেছিল। সেটা কয়েক বছর আগের কথা।
সম্প্রতি এক ওয়েব সেমিনারে অংশ নিতে গিয়ে শুনলাম, একজন খুব বিজ্ঞ ব্যক্তি বলছেন, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা অনেক ভালো আছে। দেখছেন না সরকারি সব বড় বড় চাকরিতে এখন কেমন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ধরে ধরে বসানো হয়েছে? এসব বিজ্ঞ ব্যক্তিদের কী করে বোঝাই, তাঁরা যাঁদের হিন্দু হিসেবে দেখছেন তাঁরা আসলে বাংলাদেশের নাগরিক। সম্ভবত যোগ্য বলেই তাঁরা সেসব পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, হিন্দু বলে নয়।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, ৫০ বছর পরও সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মৌলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। প্রশাসনের একাংশ সংখ্যালঘুদের প্রশ্নে উদাসীন। পুলিশ প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে বৈরী। সংখ্যালঘুরা কেমন আছে, তার পরিষ্কার ছবিটি পর্যন্ত পাওয়া কঠিন, কারণ সম্প্রদায়ভিত্তিক নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই, এ প্রশ্নে তথ্যব্যবস্থার আগ্রহও নামমাত্র। মাঝেমধ্যে মুখচেনা কিছু বুদ্ধিজীবীর প্রতিবাদ বিবৃতি পড়ে জানা যায় সত্যিকার ছবিটি। কিন্তু সে বিবৃতি পড়ে আমাদের বিবেকে বড় ধরনের আঁচড় লাগে, এ কথা ভাবার কোনো কারণ ণেই।
তা সত্ত্বেও এই নামমাত্র প্রতিবাদটুকু অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরি। সংখ্যালঘু সম্পূর্ণ একা নয়, সংহতির একটি বর্ম, তা যত দুর্বল বা ভঙ্গুর হোক না কেন, তাদের পাশে রয়েছে, সে বোধটি সংখ্যালঘুর মনে সঞ্চারিত করা খুব জরুরি।
লোহাগড়ার ঘটনার পর দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দিয়েছেন, অনেকে প্রবন্ধ লিখে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এমনকি সে হামলার বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়িয়েছে, তাদের মধ্যে সে গ্রামের মুসলমান তরুণ–যুবাও রয়েছেন। এটি আশার কথা, আস্থার কথা।
গুজরাটের ২০০২ সালের ভয়াবহ দাঙ্গার পর হিন্দু গ্রামবাসী নির্দ্বিধায় জানিয়েছিল, কিছুই জানি না, কিছুই শুনিনি। বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমান তার প্রতিবেশী হিন্দুধর্মাবলম্বীরা আক্রান্ত হলে চোখ ফিরিয়ে রাখবেন না, ‘জানি না–শুনিনি’ বলে নিজেকে প্রবঞ্চিত করবেন না, এই প্রতিবাদ থেকে এমন একটা ক্ষীণ আশা এখনো জেগে আছে।