বৈশ্বিক বাজারে বাণিজ্য–সুবিধা অব্যাহত রাখতে কর্মক্ষেত্রে শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ হতে হবে শোষণমুক্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ; যেখানে মা মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকবে ও শিশুশ্রম থাকবে না।
এ ছাড়া বাংলাদেশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে যেসব বিষয় মেনে চলতে হবে, সেসবের মধ্যে শিশু অধিকারও রয়েছে।
বাংলাদেশে শিশু অধিকার ও বাণিজ্যনীতির (সিআরবিপি) ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ বুধবার দিনব্যাপী আয়োজিত এক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। কারিগরি সহায়তায় ছিল সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এবং ইউএন গ্লোবাল কমপ্যাক্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক।
সকালের অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হয়। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সব খাত থেকে শিশুশ্রম নিরসন করতে হবে। শিশুশ্রমমুক্ত ও শ্রমিকের জন্য সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে নিয়োগকর্তারা গত ১০ বছরে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সে বিষয়ে আলোকপাত করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০২৯ সালের পর ইইউর বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাসে স্থানান্তরিত হতে হবে। এ জন্য ৩২টি আন্তর্জাতিক রীতি (কনভেনশন) অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে কর্মক্ষেত্রে শিশু অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টিও রয়েছে।
এ অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, সামাজিক ও দেশের উন্নয়নে শিশু অধিকার রক্ষার বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে এবং ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে শিশুরা সবচেয়ে মূল্যবান।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, শিশু অধিকার রক্ষায় আরও অনেক কাজ করা বাকি রয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ১০ বছর সামনে রেখে যথাযথ নীতি নেওয়া ও তা চর্চা করা দরকার। পাশাপাশি অনলাইনে শিশুর ঝুঁকি, সিসার বিষক্রিয়ায় শিশুর ক্ষতির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য–সুবিধা (জিএসপি) অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশেকে কর্মক্ষেত্রে শিশু অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান এখন শিশু অধিকারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছে। ২০২৯ সালের পর ইইউর বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাসে স্থানান্তরিত হতে হবে। এ জন্য ৩২টি আন্তর্জাতিক রীতি (কনভেনশন) অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে কর্মক্ষেত্রে শিশু অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টিও রয়েছে।
ইইউ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। ওই অঞ্চলে বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ রপ্তানিপণ্য জিএসপি পায়। বাংলাদেশ প্রতিবছর যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, এর ৬০ শতাংশ যায় ইউরোপের দেশগুলোয়। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে। তবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে জিএসপি দিতে সম্মত আছে ইইউ। জিএসপি প্লাসের জন্য এখন দেনদরবার করছে বাংলাদেশ।
এ অধিবেশন সঞ্চালনা করেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের করপোরেট অ্যালায়েন্স বিশেষজ্ঞ বেদপ্রকাশ গৌতম। সূচনা বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের (বাণিজ্য ও অর্থনীতি) ডিন অধ্যাপক হেলাল আহমেদ। তিনি দ্বিতীয় অধিবেশন সঞ্চালনা করেন।
দ্বিতীয় অধিবেশনে প্যানেল আলোচক হিসেবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান বলেন, এ মন্ত্রণালয় জাতীয় শিশুনীতি বাস্তবায়নে কাজ করছে। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন প্রণয়ন করেছে। এখন পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু বেড়েছে। উন্নয়ন সংস্থাগুলো প্রকল্পভিত্তিক কাজে সহায়তা দিতে আগ্রহী, তবে বাজেটসংক্রান্ত সহায়তা দিতে চায় না।
সামাজিক ও দেশের উন্নয়নে শিশু অধিকার রক্ষার বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে এবং ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে শিশুরা সবচেয়ে মূল্যবান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুকে অতি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা উল্লেখ করে এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁদের বড় বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে শিশু অধিকার রক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে যুক্তরাজ্য।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডে ভার্চ্যুয়ালি এ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে বলেন, সুইডেনের নামী ব্র্যান্ড বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে। তাই কর্মক্ষেত্রে শিশু অধিকার নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য জরুরি। শিশুর প্রতি কোনো ধরনের সহিংসতা সহ্য করা হবে না।
এ অধিবেশনে ইউএন গ্লোবাল কমপ্যাক্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি ও সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক সোবহান বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেকসই ব্যবসার জন্য শিশু অধিকারভিত্তিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেগুলো পালন করতে হবে।