আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা। গতকাল রাজধানীর প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল কার্যালয়ে
আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা। গতকাল রাজধানীর প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল কার্যালয়ে

কন্যাশিশুদের স্বপ্ন দেখাতে হবে

দ্বাদশ শ্রেণির আয়শা আক্তার চায় মেয়েদের শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা দূর হোক। বাল্যবিবাহ বন্ধ চান তাসনিম আজিজ (রিমি)। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারী ও কন্যাশিশুর অসহায়ত্ব ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা জানান ফাহমিদা হক। তাঁদের কথা, কন্যাশিশুর বেড়ে ওঠার পথ যেন বন্ধুর না হয়। তাদের স্বপ্নেই গড়ে উঠুক ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এভাবেই নিজেদের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন মেয়েরা। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ‘আনটিল ইউ হিয়ার মি’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রচার সহযোগী হিসেবে ছিল প্রথম আলো।

আগামীকাল ১১ অক্টোবর (শুক্রবার) আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘কন্যাশিশুর স্বপ্নে গড়ি আগামীর বাংলাদেশ’।

এই আলোচনায় অংশ নিয়ে কলেজশিক্ষার্থী আয়শা জানায়, দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ, বৈষম্য ও প্রজননস্বাস্থ্য সুবিধা না পাওয়া মেয়েদের শিক্ষার বড় প্রতিবন্ধকতা। নার্স হতে চাওয়া আয়শা প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে মেয়েদের স্বপ্নপূরণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অতিথিরা। ঢাকা, ১০ অক্টোবর

ভোলার মেয়ে তাসনিম আজিজ তাঁর এলাকায় বাল্যবিবাহের করুণ চিত্র দেখেছেন। তাঁর ভাষ্য, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে বাল্যবিবাহ কমানো যাচ্ছে না। সমাজ মেয়েদের এখনো বোঝা হিসেবে দেখে। তারা যে উপার্জন করে সংসারে অবদান রাখতে পারে, সে বিবেচনা করা হয় না।

নিজের পছন্দের ক্যারিয়ার বেছে নিতেও মেয়েরা বাধার মুখে পড়ে বলে জানান সানজিদা এশা। তিনি ইয়ুথ ফর চেঞ্জের নেটওয়ার্ক অ্যাসোসিয়েট। সানজিদা বলেন, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক কম।

আলোচনায় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুকের কাছে প্রশ্ন ছিল মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে। তিনি জানান, তাঁর মা–বাবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেতে পারেননি; কিন্তু তাঁরা দুই বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তাঁর মা–বাবা পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন।

সারাহ কুক আরও বলেন, নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছুর কেন্দ্রে নারী ও শিশুকে ভাবতে হবে। যুক্তরাজ্য সরকার ২০১৫ সাল থেকে বিশ্বের এক কোটি মেয়েকে সহায়তা করেছে বলেও জানান তিনি।

নরওয়েতে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে দেশটির রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরালড গুলব্র্যান্ডসেন বলেন, তাঁর দেশে লিঙ্গসমতাকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এরপরও নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকতে পারে। সমাজ পরিবর্তনের জন্য কর্মক্ষেত্রে, রাজনীতিতে, সামাজিকভাবে এবং মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সমাজে সবাই গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্যপ্রযুক্তিতে মেয়েদের অবস্থান প্রসঙ্গে মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউসুফ ফারুক বলেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাইক্রোসফট নারীদের অনেক প্রাধান্য দেয় এবং নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে চায়। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তিনি বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, তাঁদের সময়ে তাঁরা সমস্যা বুঝতেই পারতেন না এবং জানতেন না কী করতে হবে। কিন্তু এখনকার কন্যারা জানে, সমস্যা কোথায় এবং এর সমাধানে কী করণীয়।

প্ল্যানের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে কবিতা বোস বলেন, যে মেয়ের বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে এবং অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তানও জন্ম দিয়েছে, তাকেও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে। শুধু বাল্যবিবাহ বন্ধ নয়; এই মেয়েদের স্বপ্ন দেখাতে হবে, দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পলিসি, অ্যাডভোকেসি, ইনফ্লুয়েন্সিং অ্যান্ড ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর নিশাত সুলতানা।