দেশের জনপ্রিয় সব সংগীতশিল্পী ও ব্যান্ডের অংশগ্রহণে হয়ে গেল মহান বিজয় দিবসের কনসার্ট। গতকাল সোমবার রাজধানী ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এ কনসার্টের আয়োজন করে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন। বিএনপির উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সম্প্রতি এ সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
গতকাল দুপুরের পর শুরু হওয়া এই কনসার্ট রাত ১১টার কিছু আগে শেষ হয়। কনসার্টের পুরোটা সময় গানের তালে তালে বিজয়ের উৎসবে মাতেন হাজারো দর্শক-শ্রোতা। দর্শক–শ্রোতার ভিড় ও চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় আয়োজক ও স্বেচ্ছাসেবকদের।
কনসার্টের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারী কার্যক্রম নিয়ে লেখা প্রতিবাদী গান পরিবেশন করা হয়। এসব গান পরিবেশন করেন শিল্পী ইথুন বাবু ও মৌসুমী চৌধুরী। বেলা সোয়া দুইটার দিকে মঞ্চে ওঠেন প্রীতম হাসান। তিনি ‘খোকা’, ‘হাতে লাগে ব্যথারে’, ‘উরাধুরা’র মতো শ্রোতাপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। অনেকেই বন্ধু-পরিজন নিয়ে কনসার্টে যোগ দেন। কারও কারও সঙ্গে ছোট শিশুরাও ছিল। রাস্তায় দাঁড়ানোর জায়গা না পেয়ে তরুণদের অনেকেই সড়ক বিভাজকে থাকা গাছের ডালে বসে কনসার্ট দেখেন।
বেলা তিনটার পর মঞ্চে ওঠেন শিল্পী আলম আরা মিনু। তিনি পরিবেশন করেন ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা’ ও ‘সোনা দানা দামি গহনা’ গানগুলো। মনির খান পরিবেশন করেন ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার’ ও ‘এই বুকে বইছে যমুনা’। সাড়ে তিনটার পর কনকচাঁপা পরিবেশন করেন ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’ ও ‘সাগরিকা বেঁচে আছে তোমারই ভালোবাসায়’ গান দুটি।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে বাউলশিল্পী আলেয়া বেগম ও তাঁর ছেলে শোভন এবং চিশতী বাউল মঞ্চে ওঠেন। তাঁরা পরিবেশন করেন ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘ফুল ফুটেছে গন্ধে সারা মন’, ‘বেহায়া মনটা লইয়া’ ও ‘যদি থাকে নসিবে’র মতো জনপ্রিয় কিছু গান।
কনসার্টের শুরুতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তাটি যান চলাচলের জন্য খোলা রাখা হয়েছিল। তবে বিকেল চারটার দিকে দর্শক–শ্রোতার ভিড়ে রাস্তার ওই অংশে বেশ কিছু বাস আটকে যায়। সেসব বাসের ছাদে উঠে বসে কনসার্ট দেখতে শুরু করেন অনেকেই। পরে সড়কের ওই অংশসহ আড়ং সিগন্যাল থেকে খামারবাড়ি মোড় পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিকেল সাড়ে চারটার পরপরই মঞ্চে ওঠেন শিল্পী ইমরান মাহমুদুল ও দিলশান নাহার কনা। ইমরান পরিবেশন করেন ‘বলতে চেয়ে মনে হয়’ ও ‘দিয়েছি তোকে দিল দিল দিল’। আর কনা পরিবেশন করেন ‘ও হে শ্যাম’ ও ‘দুষ্টু কোকিল’–এর মতো জনপ্রিয় দুটি গান।
বিকেল সোয়া পাঁচটার পর মঞ্চে ওঠেন কনসার্টে দর্শক–শ্রোতার অন্যতম আকাঙ্ক্ষিত শিল্পী আসিফ আকবর। তিনি প্রথমে ‘স্বাধীন দেশে উড়বেই স্বাধীন পতাকা’, ‘ও প্রিয়া ও প্রিয়া’ গান দুটি পরিবেশন করেন। শেষ করেন বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আরাফাত রহমানের লেখা ‘বেশ বেশ বেশ...শাবাশ বাংলাদেশ’ গানটি গেয়ে। পরে গান পরিবেশন করেন বেবী নাজনীন। তিনি ‘আমাদের বাংলাদেশ’ শিরোনামে নতুন একটি গান পরিবেশন করেন। এরপর গেয়ে শোনান ‘সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি’ ও ‘বন্ধু তুমি কই কই রে’ গান দুটি।
উপস্থাপক রাফসান শাবাব ও শান্তা জাহানের সঞ্চালনায় সন্ধ্যার দিকে ব্যান্ডগুলোর পরিবেশনা শুরু হয়। প্রথমে মঞ্চে ওঠে ডিফারেন্ট টাচ ব্যান্ড। তারা পরিবেশন করে ‘শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে’ গানটি। এরপর মঞ্চে ওঠেন জেফার। পরে শিরোনামহীন, সোনার বাংলা সার্কাস ও আর্ক ব্যান্ড কনসার্টে নিজেদের শ্রোতাপ্রিয় গানগুলো গেয়ে শোনায়। কনসার্টে আরও গান পরিবেশন করে নগরবাউল, সোলস, আর্টসেল, অ্যাভয়েড রাফা। সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল নগরবাউল জেমসের। রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেমস মঞ্চে ওঠেন। একের পর এক জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন তিনি। রাত ১১টার কিছুটা আগে তাঁর গান দিয়েই শেষ হয় বিজয়ের উৎসব।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’–এর আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের কারণে ১৫-১৬ বছর বিজয়ের দিবসটি স্বাধীনভাবে উদ্যাপন করা যায়নি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর তাই এবারের বিজয় দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের গান ও দেশের শিল্পী এবং আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে সবার আগে রাখতেই এই কনসার্ট।’
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী জানান, কনসার্ট আয়োজনের উদ্বৃত্ত টাকা অসুস্থ শিল্পীদের চিকিৎসার কাজে ব্যয় করা হবে।