ইএমকে সেন্টারে ‘মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সেলর স্টিফেন ইবেলি ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। ২১ এপ্রিল, রাজধানীর গুলশানে
ইএমকে সেন্টারে ‘মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সেলর স্টিফেন ইবেলি ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। ২১ এপ্রিল, রাজধানীর গুলশানে

‘গণতন্ত্র না থাকলে মিথ্যা তথ্য বেশি ছড়ায়’

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসারের মধ্যে মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য ও গুজব বেশি ছড়াচ্ছে। সরকার ও বিরোধী দলগুলোও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এসব তথ্য ছড়িয়ে থাকে। গণতন্ত্র না থাকলে মিথ্যা তথ্য বেশি ছড়ায়। এই মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য ও গুজবের ফলে সহিংসতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

রাজধানীর গুলশানে ইএমকে সেন্টারে রোববার ‘দ্য ওয়ার এগেইনস্ট মিসইনফরমেশন কন্টিনিউস (মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে)’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসব কথা বলেন। ‘কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের সমাপনী হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সেলর স্টিফেন ইবেলি। তিনি বলেন, মিথ্যা তথ্য অনেক ক্ষেত্রে জীবন-মরণের প্রশ্ন তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি আরও খারাপ আকার ধারণ করছে।

মুঠোফোন ব্যবহারের বিস্তৃতি তুলে ধরে স্টিফেন ইবেলি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে মুঠোফোন। তাদের ভুল তথ্য ও ডিপফেকের (একেবারে আসলের মতো দেখতে ভুয়া ছবি ও ভিডিও) মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাবোঝা ও জ্ঞান থাকা জরুরি।’ তিনি বলেন, নরওয়েতে শিক্ষার্থীদের বয়স অনুসারে ফ্যাক্ট চেকিং (তথ্য যাচাই), মিথ্যা তথ্য ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই শিক্ষা দরকার।

প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশে ভুল তথ্য ছড়ানোর ধরন, কারা ছড়াচ্ছে, মূলধারার গণমাধ্যমের দায়িত্ব, সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ইনফ্লুয়েন্সারদের’ (যাঁরা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন) ভূমিকা, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের রাজনৈতিক বিভক্তি এবং দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির সঙ্গে মিথ্যা তথ্যের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক, ফ্যাক্ট চেকার (যাচাইকারী) ও ইনফ্লুয়েন্সাররা। উত্তর দেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তা স্টিফেন ইবেলি।

জিল্লুর রহমান বলেন, মিথ্যা তথ্য এমন একটি বিষয়, যেটির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়। বাংলাদেশে সরকার ও বিরোধী দলও মিথ্যা তথ্য ছড়ায়। ধর্মীয় দলগুলো মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। মূলধারার গণমাধ্যমও অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়। গণমাধ্যমগুলো তাদের অনলাইন সংস্করণে অর্থ উপার্জনের জন্যও মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়িয়ে দিয়ে থাকে।

গণতন্ত্রের চেয়ে ভালো শাসনব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে জিল্লুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র না থাকলে মিথ্যা তথ্য, গুজব বাড়তে থাকবে। উগ্রবাদের বিস্তার, সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঝুঁকিও থাকবে। মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে দেশের গণতন্ত্রের জন্যও লড়তে হবে। গণতন্ত্র শক্তিশালী না হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সহযোগিতায় ‘কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সিজিএস। স্থানীয় পর্যায়ে ভুল তথ্যের প্রক্রিয়া এবং ভুল তথ্য মোকাবিলার চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করতে প্রকল্পটি কাজ করে। এই প্রকল্পের আওতায় গত এক বছরে সারা দেশে ১৪টি সংলাপ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকেরা অংশ নেন।

প্রকল্পের অধীন ‘ভুয়া তথ্য কী: একটি শনাক্তকরণ নির্দেশিকা’ও প্রস্তুত করা হয়েছে।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেই মিথ্যা তথ্যের বিস্তার থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। তবে এমন কার্যক্রমগুলো চলমান থাকলে মিথ্যা তথ্য ও গুজব সম্পর্কে মানুষ সচেতন হবে।

সিজিএসের গবেষণা সহযোগী স্যাঁইনশৈক্য অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।