শেখ হাসিনা একনায়ক হিটলার-মুসোলিনির প্রতিভূ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও সমাজচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জাতীয় উন্নতি ও সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। এমনকি তাঁর পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছেন।
আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সমাজ-সন্দর্শন কেন্দ্র আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় আবুল কাসেম ফজলুল হক এ মন্তব্য করেন। ‘বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি’ শীর্ষক এই আলোচনায় তিনি ইউরোপে রাজনৈতিক তত্ত্ব হিসেবে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি, এর বিকাশ, ইতালিতে বেনিতো মুসোলিনি এবং জার্মানিতে হিটলারের ভূমিকা বিশ্লেষণ করেন।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদের শুরুর দিকে শ্রমিকের শ্রমের ন্যায্যমূল্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। জনগণের সমর্থনও ছিল। কিন্তু মুসোলিনি-হিটলারদের মাত্রারিক্ত ক্ষমতার মোহ শেষ পর্যন্ত তাঁদের পতনের কারণ হয়েছিল। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে। তিনি যেকোনোভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চেয়েছেন। আরও ক্ষমতা, আরও দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংক থেকে টাকা পাচার এসবই হয়ে উঠেছিল শেখ হাসিনার শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যাংক, অর্থনীতি, রাজনীতি, নির্বাচন, বিচার, প্রশাসন সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, রাজনীতিকদের লক্ষ্যই ছিল এমপি, মন্ত্রী হয়ে আরও বেশি অর্থ হাসিল করা। বিদেশে টাকা পাচার করে বাড়ি করা ও বিলাসী জীবন যাপন করা। বড় আমলাদেরও একই লক্ষ্য ছিল। পুলিশের প্রধানদের যে বিপুল অর্থবিত্তের খবর প্রকাশিত হলো, তা অকল্পনীয়। আরও তদন্ত হলে আরও অনেক লুটপাটের ঘটনা প্রকাশিত হবে। এটাই বাস্তবতা। তিনি বলেন, ভাবতেও অবাক লাগে! এত টাকা তারা কীভাবে পাচার করল। এসব টাকা যদি মোটামুটি ধাঁচেও দেশের কল্যাণে ব্যয় করা হতো, তবে দেশের অনেক উন্নতি হতে পারত।
শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, তিনিও জাতীয় সংহতি তৈরি করতে পারেননি। তাঁর দলের ভেতরের লোকেরাই তাঁকে ডোবাতে চেষ্টা করেছেন। একাংশ প্রতিবাদ করে বের হয়ে ভিন্ন দল করেছেন। অবশেষে তাঁর করুণ মৃত্যু ঘটেছে। তারপর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে পিতার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার অনেক চেষ্টা করেছেন। নিজেরাই তাঁকে ‘জাতির পিতা’, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ এমন অনেক উপাধি দিয়েছেন। কিন্তু যে ফ্যাসিবাদী কায়দায় তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন, তাতে দেশে জালিম ও মজলুমের ধারাই সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পিতার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে শেখ হাসিনা যেসব চেষ্টা চালিয়েছেন, তা সফল হয়নি। বরং তিনি তাঁর পিতার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছেন বলেই অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, সমাজ–রাষ্ট্রের উন্নতি–অগ্রগতির জন্য রাজনীতির বিকল্প নেই। ভালো রাজনীতির জন্য ভালো রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর প্রয়োজন। সে জন্য মানুষের মনোজগতের সংস্কার খুবই দরকারি।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধকার ছিলেন তরুণ গবেষক ইসরাত জেরিন। তবে অসুস্থতার জন্য তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। প্রবন্ধটি পড়েছেন সঞ্চালক মৃত্তিকা আনোয়ার। আয়োজনে আরও বক্তব্য দেন নাট্যকার রহমান চৌধুরী, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কবি ও গবেষক মুস্তফা মজিদ, আইনজীবী সাদিয়া আরমান প্রমুখ।