দিনভর পরিশ্রম করে বিকেলে গোসল সারতে যান গৃহিণী ডলি আক্তার। ঘরে ফেরার সময় বিকট শব্দে আঁতকে ওঠেন তিনি। তার চেয়েও বেশি ভয় পান ঘরের ওপর উড়ে আসা লোহার পাত নিয়ে। কোথা থেকে এই ভারী লোহার পাত উড়ে এসেছে তাৎক্ষণিকভাবে বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কষ্টের টাকায় বানানো টিনশেডের ঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কষ্ট আর যাচ্ছে না তাঁর।
সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের অক্সিজেন রিফুয়েলিং প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে উড়ে এসেছিল ডলি আক্তারের ঘরে এ লোহার পাত। শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় অবস্থিত সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে এ বিস্ফোরণ ঘটে।
এই প্ল্যান্ট থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে ডলি আক্তারের বাড়ি উপজেলার লালবাগ কেশবপুরে। বিস্ফোরণে প্ল্যান্টের লোহা ও টিনের পাত ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া একটি এলাকার নাম লালবাগ কেশবপুর। পাড়াটিতে প্রায় ৮০টি ঘর আছে। এর মধ্যে অন্তত ২০টি ঘরে লোহার পাত এসে পড়েছে। লোহার পাত পড়েছে খেতেও।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া একটি এলাকার নাম লালবাগ কেশবপুর। পাড়াটিতে প্রায় ৮০টি ঘর আছে। এর মধ্যে অন্তত ২০টি ঘরে লোহার পাত এসে পড়েছে। লোহার পাত পড়েছে খেতেও।
বিস্ফোরণের পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় স্কুলছাত্র মোহাম্মদ জিমানের। আতঙ্কে তড়িঘড়ি করে ঘরের বাইরে চলে আসে সে। ঘরের পেছনে উড়ে আসা লোহার পাত দেখে অবাক হয়। চার-পাঁচজন চেষ্টা করেও সেই লোহার পাত সরাতে পারেননি।
পাড়ার তিন প্রবীণ মো. নাছির, মো. বেলাল ও মোহাম্মদ মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বললেন, এই ভারী লোহার পাতের ওজন ৫০০ কেজির (আধা টন) কম হবে না। এ ধরনের পাত যে তাঁদের পাড়ায় এসে পড়বে, তা কল্পনাও করেননি। কপাল ভালো কেউ হতাহত হননি।
স্থানীয়রা বলেন, পাড়ায় উড়ে আসা প্রতিটি লোহার পাতের ওজন ২০ থেকে ৫০০ কেজি হবে। এতে ডলি আক্তার ছাড়াও অনেকের ঘরের ক্ষতি হয়েছে।
কষ্টের উপার্জনে দুই বছর আগে দোতলা বাড়ি করেছিলেন মোহাম্মদ শাহেদ। কিন্তু বিস্ফোরণস্থল থেকে ৩০০ মিটার দূরে থাকার পরও ভবনের সব জানালার কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। নড়বড়ে হয়ে পড়ে দরজাগুলোও।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শাহেদ বলেন, সীতাকুণ্ডে বারবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আর বারবার তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবারও তাঁদের পাড়ার অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্ষতিপূরণ পান না। এর আগে বিএম কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণে তাঁদের পাড়ার বাড়িঘর নষ্ট হয়েছিল।
বিএম ডিপো আর সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের ঠিক মাঝখানে কেশবপুর। সেখানকার বাসিন্দা জাহানারা বেগম। লোহার পাত তাঁর ঘরের বেড়ার ছাদ ও দেয়াল ছিদ্র করে দিয়েছে। বিধবা এই নারী বলেন, ‘আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এই ঘর এখন আমি কেমন করে ঠিক করব। ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।’
বিস্ফোরণের সময় ছেলেকে নিয়ে খেতে কাজ করছিলেন কৃষক মো. নাছির। তিনি বলেন, কাজ করার সময় হঠাৎ দেখেন প্রায় ৫০ কেজি ওজনের একটা লোহার পাত মাথার ওপর দিয়ে উড়ে এসে সামনে পড়ল। আরেকটু এদিক-ওদিক হলে হয়তো তাঁরা বাপ-ছেলে মারা যেতেন।