‘মেগাসিটির বিবর্তন ও শহরের বাসযোগ্যতার রূপান্তর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আলোচকেরা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামোটরে
‘মেগাসিটির বিবর্তন ও শহরের বাসযোগ্যতার রূপান্তর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আলোচকেরা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামোটরে

আলোচনা সভায় অভিমত

‘ভিটামিন ডি’ ওষুধ খেয়ে যে নগরায়ণ, তা টেকসই হবে না

মহানগর ঢাকার বাসিন্দারা জানালা খুলেও গাছের দেখা পান না। সুউচ্চ ভবন থেকে শোনা যায় না পাখির ডাক। বস্তি থেকে উচ্চবিত্তের ফ্ল্যাট—কোথাও সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। সূর্যের আলো না পেয়ে ভিটামিন ডি ওষুধ খেয়ে যে নগরায়ণ হচ্ছে, তা কখনো টেকসই হবে না।

‘মেগাসিটির বিবর্তন ও শহরের বাসযোগ্যতার রূপান্তর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নগর–পরিকল্পনা নিয়ে এসব কথা বলেন নগর–পরিকল্পনাবিদেরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে এ সভা আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।

আজকের এ আয়োজনে পরিকল্পনাবিদ তসলীম শাকুর ও শায়েব গফুর সম্পাদিত ‘মেগাসিটিস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ ইন দ্য ২০২০’ নামের একটি বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।

আমরা অনেক সময় মনে করি, সমস্যা শুধু প্রান্তিক মানুষের। আসলে প্রান্তিক থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত—এই নগরে এখন সবার সমস্যা। এখন সূর্যের আলো ঘরে ঢোকে না। বস্তি থেকে ফ্ল্যাট—কোথাও সূর্যের আলো ঢুকছে না। উন্নয়নের এই মডেল সূর্যকে আকৃষ্ট করতে পারছে না।
আদিল মুহাম্মদ খান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স

সভায় বক্তারা বলেন, মেগাসিটি ঢাকার এমন উন্নয়নকে ‘মেগা সর্বনাশ’ বলা যায়। ঢাকাসহ দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা কি মানুষের জন্য? জানালা খুলে গাছ দেখা যায় না। ভবনের তলায় তলায় শুধু শূন্যতা; যেখানে সবুজ প্রকৃতি দেখা বা পাখির ডাক শোনা যায় না। আমরা যে নগরায়ণের বিবর্তনের কথা বলছি, সেখানে মানুষ নামের প্রাণীটা যেন হারিয়ে না যায়। সব ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে গাছপালা ও জীববৈচিত্র্য মিলিয়ে নগর–পরিকল্পনার ওপর জোর দিতে হবে। ঢাকার এ উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। ভুল কোথায় হচ্ছে, তা জায়েজ না করে বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি নজরুল ইসলাম। ঢাকার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের কোয়ার্টার (আবাসিক এলাকা) প্যারাডাইসের (স্বর্গের) মতো। স্থাপত্যের দিক থেকে আকর্ষণীয় না হলেও ফাংশনালি ভালো। সবচেয়ে ভালো পরিবেশ। খেলার মাঠ আছে শতভাগ নিরাপত্তা আছে।’ সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিতে নগরায়ণবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান তিনি।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি নজরুল ইসলাম

১৯৫২ সালে যখন ঢাকায় আসেন, তখন বুড়িগঙ্গার পানি খেয়েছেন বলে জানান বিআইপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, এখন মানুষ বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার সময় রুমাল দিয়ে নাক ঢাকে। আগের সেই ঢাকার সঙ্গে বর্তমানের কোনো মিলই নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিআইপির সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। যে মডেলে ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন হয়েছে, তার সমালোচনা করে এই নগর–পরিকল্পনাবিদ বলেন, বর্তমান ঢাকার সব বাসিন্দা প্রান্তিক।

আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমরা অনেক সময় মনে করি, সমস্যা শুধু প্রান্তিক মানুষের। আসলে প্রান্তিক থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত—এই নগরে এখন সবার সমস্যা। এখন সূর্যের আলো ঘরে ঢোকে না। বস্তি থেকে ফ্ল্যাট—কোথাও সূর্যের আলো ঢুকছে না। উন্নয়নের এই মডেল সূর্যকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। ভিটামিন ডি খেয়ে যে নগরায়ণ হচ্ছে, তা কখনো টেকসই হবে না।’

নগরায়ণের যে চ্যালেঞ্জ, তা মোকাবিলায় বিদেশ থেকে ধার করা নয়, নিজস্ব জ্ঞান লাগবে বলে মনে করেন বিআইপির উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ।

ঢাকার বাসযোগ্যতার জন্য শহর বিকেন্দ্রীকরণের ওপরে জোর দেন পরিকল্পনাবিদ তসলীম শাকুর।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বুয়েটের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন ইশরাত ইসলাম, বিআইপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা শাকুর, স্থপতি শায়েব গফুর প্রমুখ।

সভা সঞ্চালনা করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।