ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধানকে চিঠি

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে আহ্বান ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্যের

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের লোগো
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের লোগো

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে একটি চিঠি লিখেছেন। গতকাল সোমবার তাঁরা ওই চিঠি পাঠিয়েছেন। এতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ, চলমান সংকটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার কথা বলা হয়েছে।

চিঠিদাতারা হলেন ইভান স্টিফেনেক (স্লোভাকিয়া), মিকেইলা সিজদ্রোভা (চেক প্রজাতন্ত্র), অ্যান্দ্রে কোভাচভ (বুলগেরিয়া), কারেন মেলচিয়র (ডেনমার্ক), হ্যাভিয়ের নারত (স্পেন) ও হেইডি হাউতালা (ফিনল্যান্ড)। চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে ইভান স্টিফেনেকের দপ্তর থেকে ই-মেইল বার্তায় প্রথম আলোকে এর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ চিঠির ব্যাপারে প্রথম আলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ মিশনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি বলেছেন, ছয় পার্লামেন্ট সদস্যের মতামত একবারেই তাঁদের নিজস্ব।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই সদস্যরা চিঠিতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে। তারা নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করেছে এবং সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতা সংহত করার জন্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, নির্যাতন, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার পর থেকে এটা ঘটেছে।

হেফাজতে নির্যাতনসহ অন্যান্য খারাপ আচরণের অভিযোগও আগের মতোই রয়েছে। প্রায়ই এসব ঘটনায় বাংলাদেশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নাম আসছে। এই নির্যাতন শুধু রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপরই সীমাবদ্ধ নয়, তা নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরও ঘটছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও রয়েছে।

বাংলাদেশের দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জালিয়াতি, কারচুপির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কার্যকর কোনো পদ্ধতি এখন নেই, যাতে জনগণ তাঁদের পছন্দের প্রতিনিধি বাছাইয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগ চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ব্যবসা ও উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘদিনের অংশীদার হওয়ার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জোরালো কারণ রয়েছে।’

ওই চিঠিতে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা বলেছেন, বাংলাদেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অবাধ, সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে ভূমিকা রাখার জন্য জোসেপ বোরেলের প্রতি আহ্বান জানান। চিঠিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং চলমান সংকটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধানের জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার কথা বলা হয়েছে।

ওই সদস্যরা আরও বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শুধু ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়াই নয়, দৃশ্যমান অগ্রগতিও হতে হবে। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইএ) প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ অথবা বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা দেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এসব শর্ত আরোপ ও মনে করিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

এর আগে মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষ যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, সে সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রেসিডেন্টকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং দায়ী ব্যক্তিদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ করেন তাঁরা।

২ জুন ভার্জিনিয়ার কংগ্রেস সদস্য বব গুড প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে লেখা ওই চিঠি নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন। চিঠিতে স্বাক্ষরদানকারী অন্য পাঁচ কংগ্রেস সদস্য হলেন স্কট পেরি, ব্যারি মোর, ওয়ারেন ডেভিডসন, টিম বুরচেট ও কিথ সেলফ। তাঁরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্য।