ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরই সরকারের ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। শুল্ক কমিয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি উঠতে থাকে। এখন সেই পথেই হাঁটছে সরকার। ডিজেলে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুল্ক-কর কমানোর ফলে ডিজেলের আমদানি ব্যয় কমবে। শিগগিরই কমানো হতে পারে ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের দাম।
শুল্কহার কমিয়ে আজ রোববার রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাৎক্ষণিকভাবেই নতুন শুল্কহার কার্যকর হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ডিজেলের শুল্ক-কর কমাল এনবিআর।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, ডিজেলের ওপর করভার ছিল ৩৪ শতাংশের মতো। আমদানি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) বাবদ আদায় করা আগাম কর কমানোর ফলে তা ২৫ শতাংশের মতো দাঁড়ায়। এতে প্রতি লিটার ডিজেল আমদানিতে ৫ টাকার মতো খরচ কমতে পারে বলে বিপিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডিজেলের শুল্কায়ন হয় ট্যারিফ মূল্যভিত্তিক। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যা-ই হোক না কেন, প্রতি লিটারের দাম ৪০ সেন্ট ধরে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম করসহ যাবতীয় কর আরোপ করেন শুল্ক কর্মকর্তারা।
বিপিসির দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে ডিজেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১৩৪ মার্কিন ডলার থাকার সময় ৬ আগস্ট দেশে সাড়ে ৪২ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এরপর বিশ্ববাজারে দাম কমে ১১৮ ডলারে নেমে আসে ১৯ আগস্ট। পরে ধীরে ধীরে এটি আবার ১৫০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে সর্বশেষ গত শুক্রবার দরটি ১৪৫ ডলারে নেমে এসেছে। এ হিসাবে এক লিটার ডিজেল ১১৪ টাকায় বিক্রি করেও ১৭ টাকা লোকসান হচ্ছে বিপিসির। তবে পেট্রল ও অকটেনে লাভ করছে করপোরেশনটি। এখন মুনাফা কমিয়ে পেট্রল ও অকটেনের দাম কমানো হতে পারে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তির দিকে। তবু শুল্ক কমিয়ে দাম কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। এতে বিপিসিকে ভর্তুকি দিতে হবে।
সূত্র বলছে, বছরে ৪৫ লাখ টন ডিজেল সরবরাহ করে বিপিসি। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ টন সরাসরি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। বাকিটা দেশের সরকারি-বেসরকারি পরিশোধনাগারে উৎপাদিত হয়। তবে আগস্ট থেকে বিদ্যুৎ খাতে ডিজেলের চাহিদা বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে এ বছর ডিজেলের আমদানি আগের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। আগের শুল্কহার অনুযায়ী চলতি অর্থবছরেও (২০২২-২৩) বিপিসির কাছ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকার মতো শুল্ক ও কর বাবদ পাওয়ার কথা সরকারের। এখন শুল্ক কমিয়ে ডিজেল আমদানিতে বিপিসির খরচ কমিয়েছে সরকার।