বিশ্লেষণ

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেভাবে সফল হয়েছে কলকাতা

২০১০ সাল থেকে এডিশ মশা নিধন ও বিস্তার রোধে আটঘাট বেঁধে নামে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন। উৎপত্তিস্থলে মশা নিধনে তারা বেশি জোর দেয়। জনগণকে সম্পৃক্ত করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মশা নিয়ন্ত্রণ কমিটি করে।

রঙ্গব্যঙ্গের জন্য পরিচিত কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের একটি ছড়া আছে, ‘রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে কলকাতায় আছি।’ ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর কবি। অথচ সেই মশা এখন শুধু কলকাতায়ই নয়, সারা বিশ্বের বড় বড় শহরে বড় এক আতঙ্কের নাম। এই ভীতির কারণ এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু (আরএনএ) ভাইরাস। কলকাতায় ডেঙ্গুর ইতিহাস প্রায় সাত দশকের পুরোনো। তবে এই ভীতি কলকাতা এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। কীভাবে তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করেছে, সেটাই এখন জনস্বাস্থ্যবিদদের আগ্রহের বিষয়।

বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এডিস মশার বিস্তার রোধ ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কলকাতা সাফল্য পেয়েছে। এ কাজে তারা যেভাবে মানুষকে সম্পৃক্ত করেছে, সেটা সবার জন্য শিক্ষণীয়। আমরা এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি।’

কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ

ঢাকা ও কলকাতা—সড়কপথে দুই শহরের দূরত্ব কমবেশি ৩২৫ কিলোমিটার। জনসংখ্যার আধিক্য, নগরায়ণ, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য—দুই শহরেই প্রায় অভিন্ন। দুই শহরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের ইতিহাসও কাছাকাছি সময়ে। কলকাতায় ডেঙ্গু মহামারি আকারে দেখা দিয়েছিল ১৯৬৩ সালে। ওই সময় ডেঙ্গুতে প্রায় ২০০ মানুষ প্রাণ হারান। আর ঢাকায় প্রাদুর্ভাব ১৯৬৫ সালে। তখন ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরকে ‘ঢাকা ফিভার’ বলা হতো।

কলকাতার মতো ঢাকায়ও গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ডেঙ্গু বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য এলাকায় যত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বা মারা গেছেন, দেশের ইতিহাসে তা সর্বোচ্চ। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে ২৭ হাজার ৫৪৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মোট মারা গেছেন ১৪৬ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা জনস্বাস্থ্যবিদদের।

ফগার দিয়ে মশা তাড়ালে এক পাড়ার মশা আরেক পাড়ায় যায়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। আমরা তাই উৎপত্তিস্থলে মশা নির্মূলের লক্ষ্য ঠিক করি। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এ ছাড়া উপায় নেই।
অতীন ঘোষ, ডেপুটি মেয়র, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন 

অন্যদিকে কলকাতায় চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬০ জন, মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কলকাতার সাফল্যের কারণ কী, কী ব্যবস্থা নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো—এসব নিয়ে প্রথম আলো কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ ও চিফ ভেক্টর কন্ট্রোল কর্মকর্তা দেবাশীষ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেছে। কলকাতায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ এলে এই দুজনের নাম সবার আগে আসে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কলকাতা কী করেছিল

কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের চিফ ভেক্টর কন্ট্রোল কর্মকর্তা দেবাশীষ বিশ্বাস

ফগার মেশিন দিয়ে মশা না তাড়িয়ে উৎপত্তিস্থলেই মশাকে ধ্বংস ও বংশবিস্তার রোধ—শুরু থেকেই এই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছে কলকাতা। ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ ১৯৮৫ সাল থেকে মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তিনি বলছিলেন, ‘ফগার দিয়ে মশা তাড়ালে এক পাড়ার মশা আরেক পাড়ায় যায়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। আমরা তাই উৎপত্তিস্থলে মশা নির্মূলের লক্ষ্য ঠিক করি। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এ ছাড়া উপায় নেই।’

কলকাতায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তিন স্তরের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১০ সালের দিকে এসব কাজের শুরু হয়। এ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণাগার গড়ে তোলা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস।

দেবাশীষ বলছিলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমি একটি গবেষণাগারের প্রস্তাব করি। ডেঙ্গুর চরিত্র বোঝা না গেলে একে নির্মূল করা যাবে না। ২০১১ সালে মাত্র চার লাখ টাকায় সেই গবেষণাগার তৈরি করা হয়েছিল। আমাদের বেশি কিছু করার দরকার ছিল না। গবেষণাগারে কেবল দেখা হতো, লার্ভা থেকে কীভাবে মশা বেড়ে উঠছে। মশককর্মীদেরও এটা দেখানো হতো। তিন হাজার মাঠকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। চোখের সামনে তাঁদের মশার চরিত্র দেখানো হয়েছিল।’

তিন স্তরের কমিটি

কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন মোট ১৬টি বরো (প্রশাসনিক অঞ্চল) এবং ১৪৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি বরোতে ৭ থেকে ১২টি করে ওয়ার্ড আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মশা নিয়ন্ত্রণ কমিটি আছে। এতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চিকিৎসক ও স্থানীয় ব্যক্তিরা আছেন। আছেন ৬ থেকে ১৫ জন মশককর্মী। প্রত্যেক কর্মীর মশা নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ আছে। এসব ওয়ার্ড কমিটির কাছে এলাকার সম্ভাব্য ডেঙ্গুর উৎসস্থলের তালিকা আছে। কলকাতায় প্রতিবছর ১০০ দিনের কর্মসূচি আছে। এসব কর্মসূচিতে যুক্ত ব্যক্তিরা ওয়ার্ড পর্যায়ে মশককর্মী হিসেবে কাজ করেন। জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে তাঁরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করেন। জুলাইয়ে মশার প্রাদুর্ভাবের মৌসুমে নজরদারি আরও বেড়ে যায়।

ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ, ওরস্যালাইনের প্রসার, টিকাদানের মতো বিষয়ে বাংলাদেশের সাফল্যের ইতিহাস আছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণেও জনগণকে সম্পৃক্ত করা হলে সাফল্য আসবে।
ডা. মুশতাক হোসেন, উপদেষ্টা, আইইডিসিআর 

মশা নিয়ন্ত্রণ কমিটির পাশাপাশি প্রতি ওয়ার্ডে আছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে শুধু ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় মোট ২৫০ চিকিৎসক আছেন। পরীক্ষায় কারও ডেঙ্গু ধরা পড়লে সেই তথ্য নির্দিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ডেপুটি মেয়র, সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রধান ভেক্টর কন্ট্রোল কর্মকর্তার মুঠোফোনে চলে যায়।

দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ওয়ার্ডের কোন কোন বাড়িতে চৌবাচ্চা, কুয়া বা ডোবা আছে—তার হিসাব ওয়ার্ড কার্যালয়ে আছে। এসব বাড়ির কোনটিতে কবে এডিসের লার্ভা মিলেছিল, তারও একটি তথ্যভান্ডার আছে। তিনি বলেন, কারও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেই ওয়ার্ডের মশা নিয়ন্ত্রণ কমিটির মাঠকর্মীরা ওই বাড়ি ও আশপাশের ৫০টি বাড়িতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। কোথাও লার্ভা পাওয়া গেলে সেখানে লার্ভানাশক দেওয়া হয়। এভাবেই উৎসে মশা নিধন করা হয়।

ওয়ার্ড কমিটির ওপর আছে বরো কমিটি। এখানেও একটি মশা নিয়ন্ত্রণ কমিটি আছে। এই কমিটিতে একজন কীট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ও চিকিৎসক আছেন। প্রতিটি বরোতে দুটি করে র‌্যাপিড অ্যাকশন টিম আছে। তাদের একটি করে গাড়ি আছে। তারা শিক্ষাকেন্দ্র, সরকারি অফিস, বিপণিবিতান, থানা, বেসরকারি বড় স্থাপনাসহ নানা স্থানে নজরদারি করে। তারা কোথাও মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থল বা নোংরা-আবর্জনা পেলে প্রথমে মালিক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানায়। জায়গাটি তারা পরিষ্কার করে দেয়। কেউ লার্ভা পাওয়ার স্থানের দায় না নিলে জমির দলিল দেখে মালিকানা চিহ্নিত করা হয়। এরপর আবর্জনা পরিষ্কারের খরচ তাঁর আয়কর নথির সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। আয়কর দিতে গেলে তখন তাঁকে জরিমানার অর্থও পরিশোধ করতে হয়।

নির্মাণাধীন ভবন মশার, বিশেষ করে এডিস মশার বড় আশ্রয়স্থল। কেউ ভবন নির্মাণ করতে গেলেই মশা নিয়ন্ত্রণ কমিটির পক্ষ থেকে তাঁদের একটি নির্দেশিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে নির্মাণাধীন ভবন কীভাবে মশামুক্ত রাখা যাবে, তার নির্দেশনা থাকে। এসব ভবন হঠাৎ পরিদর্শনে যান র‌্যাপিড অ্যাকশন টিমের সদস্যরা। প্রথম দফায় লার্ভা পেলে জরিমানা করা হয় না। পরে পাওয়া গেলে এক লাখ রুপি জরিমানা করা হয়।

আবার বরো কমিটির ওপর আছে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মশকনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় কমিটি। এই কমিটিতে একজন জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ ও তিনজন মশকনিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আছেন। কমিটির প্রধান হলেন চিফ ভেক্টর কন্ট্রোল কর্মকর্তা। এই কমিটি সার্বিক কাজ তত্ত্বাবধান করে থাকে। কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে অনেক আগেই বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দু—এই চার ভাষায় সচেতনতামূলক প্রচারপত্র করা হয়েছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারপত্র পরিবারের মধ্যে বিলি করা হয়। আর সপ্তাহে দুই দিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ডেঙ্গুবিরোধী প্রচার করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, কলকাতা রোগী ধরে ধরে নজরদারি করতে পেরেছে। যখনই কোনো রোগী পেয়েছে, তাঁর আবাসস্থল এবং কাছাকাছি এলাকায় মশকনিধন করেছে। আমাদের এখানে এটি সেভাবে হয়নি। তারা এক দিনে এ সমস্যার সমাধান করেনি। দীর্ঘ প্রচেষ্টা ছিল।’

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আসল কথা

কলকাতার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের সিংহভাগ কৃতিত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই দিতে চান প্রধান ভেক্টর কন্ট্রোল কর্মকর্তা দেবাশীষ বিশ্বাস। এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, এই ভয়াবহ সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানের পাশাপাশি মানুষকে যে সম্পৃক্ত করতে হবে, তা রাজনৈতিক নেতৃত্ব বুঝেছিল। বিশেষজ্ঞরা যেমনটা করতে চেয়েছেন, সেটা তারা করতে দিয়েছে। পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আসলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।

কলকাতার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের নাম সর্বাগ্রে আসে বলে মনে করেন দেবাশীষ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অতীন ঘোষের ভূমিকা নিয়ে দ্য পাবলিক ফিগার বিহাইন্ড পাবলিক হেলথ নামের একটি বই লিখেছেন তিনি। ২০১৫ সালে জার্মানির ল্যাপ ল্যাবার্ট একাডেমিক পাবলিশিং প্রকাশনা সংস্থা থেকে বইটি বের হয়েছে।

বইটির মুখবন্ধে বলা হয়েছে, ‘অভিজ্ঞ, পরিশ্রমী এক রাজনৈতিক নেতা, যিনি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতিতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছেন। সমাজের সেবায় তাঁর আছে দৃঢ় ইচ্ছা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মেয়র ইন কাউন্সিল (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ তাঁর কাজের সপ্রমাণ নজির স্থাপন করেছেন।’

দেবাশীষ বিশ্বাস দ্য পাবলিক ফিগার বিহাইন্ড পাবলিক হেলথ বইয়ে অতীন ঘোষের অসাধারণ কর্মকাণ্ড ও কৃতিত্ব তুলে ধরেছেন। লিখেছেন, ‘তিনি কলকাতা শহরে মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। বিশ্বের নানা প্রান্তের যেসব রাজনৈতিক নেতা জনস্বাস্থ্যমূলক কাজে নিস্পৃহ থাকেন, কলকাতার এই নেতার কাছে তাঁদের অনেক কিছু শেখার আছে।’

ঢাকার এ অবস্থা কেন

চলতি বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে যত আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে, তা অতীতের প্রথম ছয় মাসে কখনোই হয়নি। ১৯ জুলাই ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এক দিনে ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু কখনোই হয়নি। অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্য জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৫৫। গত বছর (২০২২) দেশে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়। তখন মৃত্যুর হার ছিল শূন্য দশমিক ৪৫।

ঢাকাসহ দেশের অন্যত্র ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে নাজুক, তা সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি বলেছেন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কলকাতার সাফল্যের কথা ঢাকার রাজনীতিকেরাও জানেন। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলকাতার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমরা জেনেছি। আমরা সেখান থেকে বেশ কিছু বিষয় শিখেছি।’

তবে জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করেন, কলকাতা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেভাবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে, বাংলাদেশে তা হয়নি। চাইলে এখানে সেভাবে কাজ করা যেত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজীর আহমেদ গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলকাতা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একটি ব্যবস্থাপনা তৈরি করে ফেলেছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা নিয়ে থাকলেও কোনো ব্যবস্থাপনা তৈরি করিনি। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও অদূরদর্শিতাই এ জন্য দায়ী। যখন সমস্যা তৈরি হয়েছে, তখন তড়িঘড়ি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ এটি দীর্ঘস্থায়ী একটি সমস্যা। পরিকল্পনার ভিত্তিতে স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা হয়নি। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।’

মশার লার্ভা নির্মূলে বাসিলাস থুরিংয়েনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়া বেশ কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, কলকাতায় এডিসের বংশবিস্তার রোধে ১৯৯৬ সাল থেকে বিটিআই ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিটিআই আমদানি করছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে এসব উদ্যোগের পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি দরকার জনগণকে সম্পৃক্ত করা বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ, ওরস্যালাইনের প্রসার, টিকাদানের মতো বিষয়ে বাংলাদেশের সাফল্যের ইতিহাস আছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণেও জনগণকে সম্পৃক্ত করা হলে সাফল্য আসবে।