কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে এবার মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে গুলি এসে পড়েছে। এ ঘটনার পর নিরাপত্তার কারণে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নাফ নদীর আশপাশে বসবাস করা লোকজনের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সীমান্তে বসবাস করা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ স্থলবন্দরের কিছুটা দূরে নাফ নদীর অভ্যন্তরে লালদিয়ার দ্বীপ ঘিরে এই সংঘর্ষ চলছে বলে জানা গেছে। লালদিয়া দ্বীপ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পড়েছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়। থেমে থেমে তা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত চলে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে আবার গোলাগুলি শুরু হয়। থেমে থেমে তা বেলা একটা পর্যন্ত চলতে থাকে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে লালদিয়ায় অবস্থান নিয়েছেন আরএসওর পাঁচ শতাধিক সদস্য। লালদিয়ার পূর্ব পাশে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ। সেখানে টানা আট মাস ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে আরকান আর্মি। কয়েক মাস ধরে আরএসও সরকারি বাহিনীর সহযোগিতায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়ছে। তাই লালদিয়া থেকে আরএসওকে উচ্ছেদ করতে আরাকান আর্মি গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে। পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে আরএসও। এর আগে লালদিয়া ছেড়ে চলে যেতে আরএসওকে সময় বেঁধে দিয়েছিল আরাকান আর্মি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, আজ বেলা দেড়টার দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরে দুটি গুলি এসে পড়ে। একটি গুলি লেগেছে বন্দরের ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে। গুলির আঘাতে বাইরের কাচ ভেঙে গেছে। তখন ভেতরে বসা ছিলেন ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন ও কর্মচারী আবুল বশর।
অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন জানিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেড ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ওপারের গোলাগুলির ঘটনায় ব্যবসায়ী ও সরকারি–বেসরকারি লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ওপার থেকে ছোড়া একটি গুলি এসে পড়ে হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আয়ুবের বসতঘরে। টিনশেড ঘরের চালা ছিদ্র হয়ে গুলিটি ঘরের ভেতরে আসবাবে আঘাত হানে। ঘরের মালিক মো. আয়ুব বলেন, গুলিটি তিন ইঞ্চি লম্বা। শোকেসের কিছুটা দূরে গুলি আঘাত হানলে নিশ্চিত প্রাণহানি ঘটত। গুলিটি বিজিবির সদস্যরা উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে সোমবার জাদিমোরা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আয়ুবের আঙিনা ও দমদমিয়ার আয়ুরের বসতঘরে কয়েকটি গুলি এসে পড়ে। এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্যে টানা আট মাসের বেশি সময় ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। ইতিমধ্যে আরাকান আর্মি সরকারি বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৫টির বেশি সীমান্তচৌকি ও একাধিক সেনা ব্যারাক দখলে নিয়েছে। বর্তমানে মংডু টাউনশিপে থাকা একটি সেনা ব্যাটালিয়ন ও বিজিপির একটি ব্যাটালিয়ন দখলে নিতে মরিয়া আরাকান আর্মি। কিছুদিন ধরে লালদিয়া থেকে আরএসওকে উচ্ছেদ করে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে আরাকান আর্মি।
বন্ধ স্থলবন্দরের পণ্য খালাস
গুলি পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে টেকনাফ স্থলবন্দরে আচার, আদা, শুঁটকি, সুপারিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের খালাস বন্ধ রয়েছে। পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজে নিয়োজিত দুই শতাধিক শ্রমিক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
ব্যবসায়ী ও ওমর ফারুক বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মিয়ানমার থেকে আসা একটি জাহাজের মালামাল খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১১টি ট্রাকে মালামাল ওঠানোর কাজও বন্ধ রয়েছে।