জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আরও আলাপ–আলোচনা করা হবে। আরও আলোচনা–পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে বিষয়টি দেখা হবে।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম ও ফরিদা ইয়াসমিনের পৃথক দুটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর–পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
রফিকুল ইসলাম তাঁর প্রশ্নে বলেন, সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার যে বয়সসীমা রয়েছে, তা অনেক আগে নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে দেশের মানুষের আয়ুষ্কাল ৬২ থেকে ৭২ বছরে এসে পৌঁছেছে। এখন সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার বয়সসীমা শিথিল করে অন্তত ৩৫ বছরের কাছে নিয়ে যাওয়া যৌক্তিক হবে। এটা হলে কর্মসংস্থানের অভাবে হতাশাগ্রস্ত তরুণ ও যুবসমাজ প্রতিযোগিতায় এসে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে পারবেন।
জবাবে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তাদের জন্য সেটা ৩২ বছর করা হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে।
চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরে যাওয়ার বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারি চাকরিতে এখন বেশ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দিয়েছেন। সরকারি চাকরির পরিবেশ থেকে শুরু করে বেতনকাঠামো নতুন প্রজন্মের কাছে বড় আকর্ষণ তৈরি করেছে। সরকারের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা একটি সম্মানের বিষয়। আবার চাকরির নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বেতনকাঠামো এবং কাজের পরিবেশও সুন্দর হয়েছে।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা সব সময় বলে আসছি, ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট (সদ্য স্নাতক পাস) যারা, তাদের রিক্রুট (নিয়োগ) করতে চাই। এটা সরকারের একটা পলিসি (নীতি)। আমরা বিসিএসের মাধ্যমে দেখে থাকি, ২২–২৩ বছর বয়স থেকেই বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। তারা ৬–৭ বছর সময় পেয়ে থাকে। এ জন্য তারা যোগদানের যথেষ্ট সময় পাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সংসদে জানিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় যুগের প্রয়োজনে নতুন যেটা করলে ভালো হবে, সেটা চিন্তাভাবনা করে থাকি। তবে মনে করি, এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। আমরা চাকরির বয়স আগামীতে বাড়াব কি বাড়াব না, বাড়ালে ভালো হবে কি না—এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও আলাপ–আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’
সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, চাকরির বয়স ৩৫ বছর করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী একটি আধা সরকারি পত্র দিয়েছেন বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। এ বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, তা তিনি জানতে চান।
শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে তাঁরা এ ধরনের একটি পত্র পেয়েছেন জানিয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলাপ–আলোচনা করব। তবে আপাতত চাকরির প্রবেশের বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত আমাদের সিদ্ধান্ত নেই। এটা নিয়ে আরও আলোচনা পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে দেখব।’