ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বিভিন্ন গন্তব্যে বাসভাড়া ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। আজ রোববার রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে বাসভাড়া আদায়ের এ চিত্র দেখা যায়।
যাত্রীদের অভিযোগ, দূরপাল্লার বাস কোম্পানিগুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো করে বেশি টাকা আদায় করছে।
তবে বাস কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে, তারা এখনো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা হাতে পায়নি। তালিকা পেলে সে অনুযায়ী, ভাড়া নেবে।
গাবতলীতে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার থেকে জানানো হয়, ঢাকা থেকে আগে কুড়িগ্রামের ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা। এখন ১ হাজার টাকা। রংপুরের ভাড়া ছিল ৭০০ টাকা। এখন ৮৫০ টাকা। নওগাঁর ভাড়া ছিল ৫৫০ টাকা। এখন ৭০০ টাকা। পঞ্চগড়ের ভাড়া ছিল ৯৫০ টাকা। এখন ১ হাজার ৪০ টাকা। ঠাকুরগাঁওয়ের ভাড়া ছিল ৯০০ টাকা।এখন ১ হাজার টাকা। খুলনার ভাড়া ছিল ৬৯০ টাকা। এখন ৮০০ টাকা। যশোরের ভাড়া ছিল ৫৫০ টাকা। এখন ৬৫০ টাকা। বরিশালের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। এখন ৭০০ টাকা। বরগুনার ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা। এখন ৮৫০ টাকা। কুয়াকাটার ভাড়া ছিল ৮৫০ টাকা। এখন ৯২০ টাকা। ঝালকাঠির ভাড়া ছিল ৬৫০ টাকা। এখন ৭৫০ টাকা।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার মো. আবদুল্লাহ বলেন, সরকার নতুন বাসভাড়া ঘোষণা করার পর মালিকেরা এটা (ভাড়া) ঠিক করেছেন।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিনের বর্ধিত দাম কার্যকর করা হয়। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে নতুন বাসভাড়া ঘোষণা করা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার পথে বাসভাড়া বেড়েছে ২২ শতাংশ। নগরে বাসভাড়া বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ।
দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৪০ পয়সা বেড়ে ২ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ নগর পরিবহনে প্রতি কিলোমিটারে ৩৫ পয়সা ভাড়া বেড়ে এখন ২ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। নতুন ভাড়া আজ থেকে কার্যকর হয়েছে।
বগুড়ার শেরপুর থেকে গতকাল শনিবার দুপুরে শ্যামলী পরিবহনের বাসে করে খালাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন মো. রিয়াদ হাসান। জনপ্রতি ভাড়া দেন ৪৫০ টাকা। খালাকে রেখে আজ রোববার বগুড়ায় ফিরে যাচ্ছেন রিয়াদ। তিনি আজ সকালে ঢাকা থেকে একই পরিবহনের বাসের টিকিট কেনেন ৫৫০ টাকায়। অর্থাৎ, এক দিনের ব্যবধানে রিয়াদকে একই দূরত্বের বাসভাড়ার জন্য ১০০ টাকা বাড়তি গুনতে হয়েছে।
আজ সকালে রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে শ্যামলী পরিবহনের বাস কাউন্টারের সামনে কথা হয় রিয়াদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির চাপ সর্বত্র পড়েছে। পরিবহনসহ সবকিছুতে বেশি টাকা লাগছে।’
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রিপন ঘোষ বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়া পর্যন্ত আমরা ১০০ টাকা বাড়তি রাখছি।’
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার থেকে জানানো হয়, তারা আগে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত ৮৫০ টাকা ভাড়া নিত। এখন তার সঙ্গে ১০০ টাকা যুক্ত হয়েছে। আগে ঢাকা থেকে দিনাজপুরের ভাড়া ছিল ৭৫০। এখন তা ৭৯০ টাকা। ঢাকা থেকে রংপুরের ভাড়া আগে ছিল ৭০০ টাকা। এখন ৭৪০ টাকা। ঢাকা থেকে গাইবান্ধার ভাড়া আগে ছিল ৬০০ টাকা। এখন ৬৫০ টাকা।
গাবতলীতে ন্যাশনাল ট্রাভেলসের বাসে ঢাকা থেকে রাজশাহীর আগে ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৭২০ টাকা। ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আগের ভাড়া ছিল ৭০০ টাকা। এখন তা নেওয়া হচ্ছে ৮৫০ টাকা।
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তা বলেন, ‘যাত্রীরা আমাদের কাছে অসহায়। আমরা তেলের কাছে অসহায়। আর তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এভাবেই চলছে।’
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের কাউন্টারে বসে ছিলেন এক যাত্রী। তিনি গত শুক্রবার রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। আজ আবার রাজশাহী ফিরে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসার সময় ৬০০ টাকায় আসলাম। এখন যেতে হচ্ছে ৭২০ টাকায়। হুট করে ভাড়া দেড় শ টাকা বেড়ে গেল। আমাদের এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।’