জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে

প্রকৃতি ধ্বংস করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিতের দাবি

মহাপরিকল্পনা হওয়ার আগেই বনাঞ্চল নিধন ও জলাশয় ভরাট করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সব কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়ে প্রকল্পের কাজ স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন তারা।

রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জলভরা হ্রদে লাল শাপলা, কাঁঠাল, শাল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালুসহ এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। বিপন্ন বন্যপ্রাণীসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থলও এটি। বিশ্ব বরেণ্য স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ১৯৬৭ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) করেছিলেন, তাতে প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে নকশা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো নির্মাণের অজুহাতে নির্বিচারে বনাঞ্চল নিধন ও জলাশয় ভরাট করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের মহাপরিকল্পনাটি কার্যত বাতিল করে ফেলা হয়েছে।’

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অভিযোগ, ‘গৃহীত নতুন প্রকল্পের আলাদা কোনো অনুমোদিত মহাপরিকল্পনা নেই। একটি লে-আউট প্ল্যানকে মহাপরিকল্পনা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৩১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে তারা একনেক থেকে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়, যা পূর্বের চাহিদার চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি। গৃহীত অবকাঠামো প্রকল্পের অধীনে তিন ধাপে মোট ২১টি স্থাপনা নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে ছয়টি আবাসিক হল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কোনো ধরনের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) না করে ও রাজউকের অনুমোদন না নিয়েই নির্বিচারে ক্যাম্পাসের বনভূমি উজাড় ও জলাভূমি ভরাট করে ভবন নির্মাণ হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মানবাধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল, নিজেরা করি–এর সমন্বয়কারী খুশী কবির, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মঞ্চের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।