মিয়ানমারে সামরিক সরকার আসার পর ইয়াবা পাচার আড়াই গুণ বেড়েছে

ইয়াবা
ফাইল ছবি

মিয়ানমারে সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশটি থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার আগের চেয়ে আড়াই গুণ বেড়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং ইয়াবা কারবারিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

গত ২১ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ওই বিষয় উল্লেখ করেন। বৈঠকটির কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ওই কার্যবিবরণী অনুমোদন দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারকে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।

এদিকে গত ২১ জুলাইয়ের বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সদস্য পীর ফজলুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট৶মন্ত্রী ইয়াবা পাচার বেড়ে যাওয়ার তথ্য দিয়ে বলেন, নাফ নদী ছাড়াও দুর্গম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে। বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির অনেক দুর্গম পথ রয়েছে, যেখানে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা সম্ভব হয় না। সেখানকার একটি বিওপি (সীমান্ত চৌকি) থেকে অন্য বিওপিতে যেতে দুই দিন সময় লেগে যায়। ওই সব এলাকায় বিওপির সংখ্যা বাড়ানো এবং দুটি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে টহল জোরদারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করে।

এই বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের হাত ধরেই মূলত বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার শুরু হয়। এরপর সারা দেশে তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেও মাদক বাণিজ্য ও সেবন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

উল্লেখ্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ ও ২১ সালে দেশে ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮১ হাজার ১৭টি ও ৫ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৫টি। এক বছরের ব্যবধানে ইয়াবা উদ্ধার বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রেও ইয়াবাসেবীদের চিকিৎসা নেওয়ার হার আগের বছরের তুলনায় গত বছর (২০২১ সাল) প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
সতর্ক থাকার সুপারিশ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গতকালের বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার সুপারিশ করেছে কমিটি।

সংসদীয় কমিটি আরও বলেছে, স্বামী-স্ত্রী সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকলে তাঁদের পাশাপাশি কর্মস্থলে পদায়নের বিষয়টি যাতে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা হয়। এ ছাড়া সংসদ সদস্যদের থাকার ভবনের পাশে গাড়ি চলাচলের সময় হর্ন না বাজানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করেছে কমিটি।

কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মো. হাবিবর রহমান, সামছুল আলম, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, নূর মোহাম্মদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও রুমানা আলী অংশ নেন।