ছিনতাই, মারধর, হেনস্তা, চাঁদাবাজিসহ নানা নেতিবাচক ঘটনায় যুক্ত থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ২১ নেতা-কর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ ছাড়া চাঁদার জন্য হুমকি ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকায় এক নেতাকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
আজ রোববার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহ।
গত ৩০ জানুয়ারি চাঁদার জন্য তলব করার পর যেতে রাজি না হওয়ায় প্রথমে ফোনে হুমকি ও পরদিন লোক পাঠিয়ে রাজধানীর বঙ্গবাজারের এক পানি ব্যবসায়ীর মালামাল ভাঙচুর করানোর অভিযোগ ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অমর একুশে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হাসান ওরফে সোহাগের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
অন্যদিকে গত ১৫ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক দম্পতিকে মারধর ও হেনস্তা করে স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের অভিযোগে করা মামলায় দুই দিন পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তানজির আরাফাত ওরফে তুষার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানজির। তবে এক দিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে আবার ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। একই মামলার আরেক আসামি ছিলেন জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী রাহুল রায়। এ ঘটনায় দুজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।
আরও যাঁরা বহিষ্কৃত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঢাবির সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ফাহিম তাজওয়ার ওরফে জয় ও সাজিদ আহমেদ। ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় মাস্টারদা সূর্য সেন হলের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল মোতালেব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধর এবং ছিনতাইয়ের ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি তাঁরা।
৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কাভার্ড ভ্যান আটকে টাকা ছিনতাই ও চালককে মারধরের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) মসজিদের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাবির বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ফজলে নাভিদ ওরফে সাকিল, সাদিক আহাম্মদ ও মো. রাহাত রহমান। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় তিনজনই এখন কারাগারে।
৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক আসাদুল্লাহ আসাদ, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান ওরফে বাঁধন, গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ ওরফে পলক, উপদপ্তর সম্পাদক জিহাদুল ইসলাম, অর্থবিষয়ক উপসম্পাদক আল কাওসার এবং গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক উপসম্পাদক শাওন চৌধুরী।
৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক শাহ আলম ওরফে রাতুল, কর্মী নূর মোহাম্মদ ওরফে নাবিল ও কামরান সিদ্দিক ওরফে রাশেদ। তিনজনই কেমিক্যাল অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।
৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের সামনের সড়কে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় দুটি রিকশা ভেঙে যায়। এর মধ্যে একটি রিকশার চালকের পা ভেঙে যায়। ঘটনা দেখে প্রাইভেট কারটি আটকে চালককে মারধর করেন শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী। একপর্যায়ে তাঁর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়। পরদিন প্রাইভেট কারটির চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক উপসম্পাদক নাজমুল হাসান ওরফে রুপু ও ফজলুল হক হল শাখার কর্মী মো. তারেকসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
৮ ফেব্রুয়ারি রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলে এক যুবককে অচেতন করে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক অসিত পালের বিরুদ্ধে।
৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে বাধা দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপপক্ষ ভিএক্স ও বাংলার মুখের অনুসারীরা। ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় ক্যাম্পাসে কর্মরত এক নারী সাংবাদিককে হেনস্তা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন তাঁরা। ওই ঘটনায় জড়িত নেতা–কর্মীদের অন্যতম ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইসলাম।
এ ছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখার সাবেক সহসম্পাদক রাকিবুল ইসলাম ওরফে রাকিব এক নারী নেত্রীকে মারধর ও শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ওই নেত্রী সূত্রাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন। দেশরত্ন শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের আদলে স্মার্ট ছাত্রলীগ গড়তে কাজ করছি। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কারও কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ২১ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কারের মাধ্যমে সংগঠনের সব পর্যায়ে এই বার্তাটি দিতে চাই যে ছাত্রলীগে অপরাধীদের কোনো ছাড় নেই।’
সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে কেউ এ ধরনের ঘটনায় যুক্ত হলে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়ম ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।’