ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জে জুট ট্রেডিং করপোরেশনের (জেটিসি) অধীনে ‘পাট ক্রয়কেন্দ্রের’ ৫৪ শতক জমি ‘নামমাত্র মূল্যে’ দরপত্রের মাধ্যমে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন। সরকারি ওই জমি ‘নামমাত্র মূল্যে’ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
একটি দৈনিকে ‘পানির দরে বিক্রি হচ্ছে পাট ক্রয়কেন্দ্রের জমি, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয় গত ১১ সেপ্টেম্বর। বিষয়টি নিয়ে তিনটি গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘নামমাত্র মূল্যে’ ওই জমি হস্তান্তরের বৈধতা নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের আইনজীবী মো. আবদুস সালাম গতকাল রোববার রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বিভূতি তরফদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ জুট করপোরেশের চেয়ারম্যান ও ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসকসহ ১১ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী বিভূতি তরফদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিবগঞ্জে পাট ক্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৯৭৪ সালের সরকার ওই জমিটি ৪৫ লাখ টাকা মূল্যে কিনে নেয়। ২০১১ সালে ওই সম্পত্তি ৩১ লাখ টাকায় বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচনের পর এখন সম্পত্তিটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। অথচ সম্পত্তিটির বর্তমান মূল্য তিন কোটি টাকার ওপরে। নামমাত্র মূল্যে সম্পত্তিটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার কারণ রাষ্ট্র ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যে কারণে রিটটি করা হয়।’
গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের ভাষ্য, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জে জুট ট্রেডিং করপোরেশনের (জেটিসি) অধীনে ‘পাট ক্রয়কেন্দ্রের’ ৫৪ শতক জমি নামমাত্র মূল্যে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ওই জমির আনুমানিক বাজারমূল্য ৩ কোটি টাকা হলেও তা ৩১ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় হন্তান্তরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি জানাজানির পরও জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭৪ সালের ২৯ জুন ৪৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যে শিবগঞ্জে পাট ক্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৫৪ শতক জমি কেনে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত জেটিসি। জেটিসির অধীনে পরিচালিত সব পাট ক্রয়কেন্দ্র ২০০০ সালের দিকে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। একপর্যায়ে দেশের পাটশিল্পে মন্দা দেখা দিলে কেন্দ্রগুলো অব্যবহৃত হতে শুরু করে। এর মধ্যেই পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে কেন্দ্রগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শিবগঞ্জে টেন্ডার শেষে ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর ৩১ দশমিক ৭৬ লাখ টাকা মূল্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজিউল ইসলামের কাছে ওই ৫৪ শতক সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। সেই লক্ষ্যে এ বিষয়ে ইচ্ছাপত্র ইস্যু করা হয়।