পর্যটকশূন্য রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুতে ছুটির দিনেও নেই ভিড়। আজ সকালে তোলা
পর্যটকশূন্য রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুতে ছুটির দিনেও নেই ভিড়। আজ সকালে তোলা

তিন পার্বত্য জেলা পর্যটকশূন্য, প্রতিদিন ক্ষতি কোটি টাকা

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ ও সহিংস পরিস্থিতিতে ৯ দিন ধরে পর্যটক নেই পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে। এ পরিস্থিতিতে তিন জেলায় পর্যটন–সংশ্লিষ্ট হোটেল-মোটেল মালিক, পরিবহন ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক। 

পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৮ জুলাই থেকে রাঙামাটিতে পর্যটক আসছেন না। জেলার কাপ্তাই হ্রদ, শুভলং ঝরনাসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। জেলার হোটেল-মোটেলগুলোতেও পর্যটক নেই। পর্যটননির্ভর বিভিন্ন জীবিকায় নিয়োজিত মানুষ বেকার সময় কাটাচ্ছেন। 

রাঙামাটি আবাসিক হোটেল ও কটেজ মালিক সমিতির সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটি শহরে ৫৩টি আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। এসব হোটেল–মোটেলে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক। পর্যটক না থাকায় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অলস সময় কাটছে। শহরের হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, গত ৯ দিনে তাঁদের প্রায় ৪ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। সাজেকের হোটেল-মোটেলের মালিকেরা জানিয়েছেন, পর্যটক না থাকায় তাঁদেরও অন্তত দুই কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। একইভাবে পর্যটকনির্ভর বিভিন্ন নৌযান ও যানবাহন, হোটেল-রেস্টুরেন্টের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাঁদের লোকসানের পরিমাণ এক কোটি টাকার বেশি।

বান্দরবান

বান্দরবানে ১০ থেকে ১২ দিন ধরে পর্যটকেরা আসছেন না। জেলার পর্যটনকেন্দ্র শৈলপ্রপাত, নীলাচল, মেঘলা ও স্বর্ণমন্দির, শহরতলির রামমন্দির, রেইছার রূপালী ঝরনা, নীলগিরি ও চিম্বুক কোথাও কোনো কোলাহল নেই। পর্যটক নেই, তাই পর্যটন–সংশ্লিষ্ট হোটেল-মোটেল, অবকাশ যাপনকেন্দ্র, গাড়িচালক, ট্যুরিস্ট গাইড, দোকানি ও সড়কের ধারে ফল বিক্রেতা সবার কাজও নেই। কর্মহীন ও দোকানে বিক্রয়হীন মানে আয়হীন। আর আয় হারানো মানে পরিবার–পরিজন নিয়ে কষ্টের জীবন জানালেন শৈলপ্রপাতের ফল বিক্রেতা নারী সিয়ামপুই লুসাই।

হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ জানিয়েছেন, আন্দোলন কর্মসূচি ও কারফিউ থাকায় জেলার ৮০টি হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট, ৪৫০টি যানবাহন ও ৩৫০টি যন্ত্রচালিত নৌকার মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়া কমিউনিটি ট্যুরিজমে জড়িত ৫০০ পরিবার, দেড় শতাধিক খাবারের দোকান, প্রায় ৫০০ ট্যুরিস্ট গাইডসহ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১০ হাজার মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। পরোক্ষভাবে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের কমবেশি আয় কমেছে।

চলমান পরিস্থিতিতে পর্যটকশূন্য শহরের শৈলপ্রপাত পর্যটনকেন্দ্র। আজ সকাল ১১টায় তোলা

খাগড়াছড়ি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংস পরিস্থিতিতে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা। পর্যটক না আসায় হোটেল–মোটেলগুলো খালি। চলছে না পর্যটকবাহী যানবাহন।

পার্বত্য যানবাহন মালিক সমিতির সভাপতি নির্নিমেষ দেওয়ান বলেন, স্বাভাবিক সময় প্রতিদিন তাঁদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত অন্তত অর্ধশত গাড়ি পর্যটকেরা সাজেকসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ভাড়া নিতেন। ছুটির দিনে ভাড়া হতো তিন শতাধিক গাড়ি। ১৮ জুলাইয়ের পর কোনো গাড়িই ভাড়া পাচ্ছে না। খাগড়াছড়ি হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া বলেন, খাগড়াছড়িতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৭টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে হাতে গোনা কয়েকটি হোটেলে পর্যটক রয়েছেন। অন্য হোটেল-মোটেল পুরোটাই খালি। পর্যটক না থাকায় বেকার সময় কাটাচ্ছেন রেস্তোরাঁর মালিক ও কর্মচারীরাও।

ছুটির দিনেও পর্যটকশূন্য খাগড়াছড়ি আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। ছবিটি আজ দুপুরে তোলা

আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, এক সপ্তাহ ধরে আলুটিলায় পর্যটক নেই বললেই চলে। যে ৮ থেকে ১০ জন আসছেন, তাঁরা স্থানীয়। অথচ ছুটির দিন ছাড়াও স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন অন্তত ১০০ পর্যটক আসতেন।