আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন 

দোষী সাব্যস্ত হলে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

গত জুলাই ও আগস্টের শুরুতে দেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচার শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করা হয়েছে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে সদস্য হিসেবে আছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

পর্যাপ্ত বিচারপতির অভাবে ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দিতে দেরি হয় বলে জানান অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে হাইকোর্টের দুজন বিচারপতি এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজকে নিয়ে মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা করার ছিল, তা সম্পন্ন করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা কাজ শুরু করেছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, তিনি যতটুকু অবগত হয়েছেন, ইতিমধ্যে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানকালে নির্মম গণহত্যা ঘটেছে, এক হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে আহত করা হয়েছে। এই অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দু-এক দিনের মধ্যে সক্রিয় হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও সদস্য শফিউল আলম মাহমুদ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে ৮ অক্টোবর নিয়োগ পেয়েছিলেন।

আইন সংশোধন হচ্ছে, তবে বিচার আটকে থাকবে না

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন এ মাসেই চূড়ান্ত হতে পারে জানিয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, তবে সংশোধনীর জন্য বিচার আটকে থাকবে না। বিচারের সঙ্গে সংশোধনীর সম্পর্ক নেই। এখন যে অবস্থায় আছে, এ অবস্থাতেই বিচার শুরু হতে পারে।

সংগঠনের বিচারের বিষয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতে আইনে সংশোধনী আনা হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।

১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন করা হয়। ১৯৭৩ সালে করা এ আইনে এখন পর্যন্ত কয়েকবার সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ সালে এ আইনে প্রথমবার সংশোধনী এনে আইনটি মূলত হালনাগাদ করা হয়। এরপর ২০১২ সালে দ্বিতীয় সংশোধনী এনে আসামির অনুপস্থিতিতে তাঁকে পলাতক ঘোষণা করে বিচার এবং এক ট্রাইব্যুনাল থেকে আরেক ট্রাইব্যুনালে (প্রথমে ট্রাইব্যুনাল ছিল একটি, পরে দুটি করা হয়) মামলা স্থানান্তরের বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৩ সালে সর্বশেষ সংশোধনী আনা হয়। এর ফলে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের সমান সুযোগের বিধান যুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে অন্তত ৫৫টি মামলার রায় এসেছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে শীর্ষ পর্যায়ের ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। তাদের পাঁচজন জামায়াতে ইসলামীর এবং একজন বিএনপির তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় নেতা।

শেখ হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হলে ফেরত চাওয়া হবে

মূল অভিযুক্তদের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় যাঁরা দায়ী ছিলেন বলে আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে, যাঁরা প্রকাশ্যে গুলি করার হুমকি দিয়েছেন ছাত্র-জনতাকে প্রতিরোধ করার, এমনকি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই গ্রেপ্তার হননি, আত্মগোপনে আছেন, পালিয়ে গেছেন। যাঁরা গ্রেপ্তার আছেন, তাঁদের বিচারে সমস্যার কথা না। আর যাঁরা পালিয়ে গেছেন, পলাতকদের বিচার করার বিধান এই আইনে রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে, কেউ যদি সেই দেশে থাকেন, তাহলে চুক্তি অনুযায়ী ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। যাদের সঙ্গে চুক্তি নেই, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা অনুযায়ী ফিরিয়ে আনতে যতটুকু চেষ্টা করার তা করব।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, সাধারণত যখন কেউ দোষী সাব্যস্ত হন, প্রত্যর্পণের বিষয়টি তখন আসে। ভারতে থাকলে, ভারতের সঙ্গে যেহেতু চুক্তি আছে, চাওয়াটা সহজ হবে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই চাওয়া হবে।