অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে এবারের নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে। এক দশক আগে দশম সংসদ নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থী ছিলেন ২০২ জন। এবারের নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা ৫৭১ জন। এত কোটিপতি প্রার্থী অতীতের কোনো নির্বাচনেই ছিলেন না।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রার্থীদের নির্বাচনী হলফনামা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘নির্বাচনী হলফনামার তথ্যচিত্র: জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’ শিরোনামে এই বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়।
বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবারের সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগসহ ৩১টি নিবন্ধিত দল অংশ নিচ্ছে। টিআইবির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রার্থীদের ৮২ শতাংশই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী। বাকি ১৮ শতাংশ (৩৪৭ জন) লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। ৫৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ প্রার্থী ব্যবসায়ী, ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ আইনজীবী আর ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষক। রাজনীতিবিদ প্রার্থী মাত্র ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
টিআইবির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১০০ কোটি টাকার বেশি আছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা এবার ১৮ (মোট প্রার্থীর ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ)। ১ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকার মালিক মোট প্রার্থীর ২১ দশমিক ২০ শতাংশ, ১০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার মালিক প্রার্থীদের ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকার মালিক ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। হলফনামা অনুযায়ী এসব প্রার্থী, তাঁদের স্বামী বা স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে থাকা মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৬ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।
টিআইবির বিশ্লেষণ বলছে, অস্থাবর সম্পদের ৬৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ১৭৬ কোটি টাকার ধরন দেখানো হয়েছে ‘অন্যান্য’ হিসেবে। এই বিপুল টাকার ৯৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ আছে প্রার্থীদের নিজেদের নামে। এ ছাড়া স্ত্রী বা স্বামীর নামে ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও নির্ভরশীলদের নামে আছে বাকি টাকা।
প্রার্থীদের বন্ড, ঋণপত্র, শেয়ার ও বিনিয়োগ আছে ১০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকার। এর ৭২ দশমিক ৪৫ শতাংশ আছে প্রার্থীদের নিজেদের নামে। ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ আছে স্ত্রী বা স্বামীর নামে। বাকি ১ দশমিক ২৮ শতাংশ নির্ভরশীলদের নামে।
প্রার্থীদের হাতে ও ব্যাংকে নগদ টাকা আছে ৪ হাজার ৫২৭ কোটি। এই টাকার ৭৬ দশমিক ৫৯ শতাংশই প্রার্থীদের নিজেদের নামে। বাকি টাকার ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ আছে প্রার্থীদের স্ত্রী বা স্বামীর নামে।
এর বাইরে প্রার্থীদের ১ হাজার ২০৫ কোটি টাকার যানবাহন, ২৭৯ কোটি টাকার আসবাব ও ইলেকট্রনিকস, ১৩৩ কোটি টাকার সোনা ও অন্যান্য অলংকার এবং ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা আছে। এর মধ্যে সোনা ও অলংকারের ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং বৈদেশিক মুদ্রার ৫৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ আছে প্রার্থীদের স্ত্রী বা স্বামীর নামে।
এবারের নির্বাচনে ৫৭১ জন কোটিপতি প্রার্থীর ২৩৫ জনই (৮২ দশমিক ১৭ শতাংশ) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি আছেন ১৬৩ জন, যাঁদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত। এবার জাতীয় পার্টির (জাপা) ৪৭ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৭ জন, জাসদের ৭ জন, তৃণমূল বিএনপির ৬ জন এবং ওয়ার্কার্স পার্টির ৫ জন কোটিপতি প্রার্থী রয়েছেন।
সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদের মালিক নারায়ণগঞ্জ–১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী। শীর্ষ ১০ কোটিপতি প্রার্থীর ৬ জনই এবার আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।