‘ছেলের জন্য ভাত রান্না করলাম, কিন্তু খাওয়াতে পারলাম না। সাঁতার জানত না। হ্রদে গোসল না করার জন্য বলেছি। কিন্তু তার বন্ধু ডেকে নিয়ে গেল। আমার ছেলে ছাড়া কেমনে বাঁচব, আমি মরে যাব।’
এভাবেই বিলাপ করে কাঁদছিলেন পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এডিসন সাহার (১৫) মা মিনা রাণী সাহা। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে রাঙামাটি শহরের তবলছড়ির আর্ট কলোনির এডিসন সাহাদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্বজনদের সঙ্গে। শুক্রবার দুপুরে কাপ্তাই হ্রদে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায় সে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত শিক্ষার্থীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে এডিসন, অর্ণব ও তাদের আরেক বন্ধু শিবম দাশ কোচিং থেকে ফেরার পথে হ্রদের পানিতে গোসল করতে নামে। তাদের কেউই সাঁতার জানত না। গোসলের একপর্যায়ে তিনজনই পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে তাদের উদ্ধার করে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক এডিসন সাহা ও অর্ণব চৌধুরীকে মৃত ঘোষণা করেন। শিবম দাশকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। তিন শিক্ষার্থীই রাঙামাটি শহরের বাসিন্দা।
এডিসন সাহা রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বড় বোন রাঙামাটি সরকারি কলেজে অনার্স পড়ছেন। সন্তানহারা পিতা অমিত সাহা বলেন, ‘দুপুরের দিকে মুঠোফোনে জানতে পারি আমার ছেলে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর তাকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পর থেকে আমার স্ত্রীর বিলাপ থামানো যাচ্ছে না। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা ছিল। এক দিনে সব শেষ হয়ে গেল। এখন কী করব কিছু বুঝতে পারছি না।’
রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী বলেন, কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহত দুজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।