বাংলা একাডেমির সবুজ চত্বরে আমগাছের তলায় বৃত্তাকারে সাজানো বইয়ের পসরা। দেশি-বিদেশি বহু লেখকের রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের বই। উত্তর পাশে পুকুরের কিনারের স্টলে তৈরি হচ্ছে গরম–গরম পিঠা আর সঙ্গে চা। বর্ধমান হাউসের বারান্দায় মঞ্চ করে অনুষ্ঠান। সেখানে গুণী শিল্পীদের গান আর প্রাজ্ঞজনদের আলোচনা। বইমেলায় আর কী লাগে? প্রথমার বিজয় বইমেলায় তাই অনেক পাঠকের সমাগম হচ্ছে।
মেলা উপলক্ষে প্রতিদিন বিকেলে থাকছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পর্ব। আজ শনিবার ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতার ভেতর দিয়ে শুরু হয়েছিল আনুষ্ঠানিকতা। এরপরই ছিল রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী লাইসা আহমদ লিসার গান। তিনি শুরু করেছিলেন ‘তোমারি তরে, মা, সঁপিনু এ দেহ’ গানটি গেয়ে। পরে গেয়েছেন ‘ও আমার দেশের মাটি’ এবং ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ’। পরে ছিল আলোচনা পর্ব। সংগত কারণেই আলোচনায় শহীদ বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানচর্চা, বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান—এসবই ছিল আলোচনার প্রসঙ্গ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও কথাশিল্পী সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তাঁর আলোচনায় বলেন, এই দিনটি জাতির জন্য বেদনাবহ। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিচারণা করে বলেন, তাঁদের কেউ কেউ তাঁর শিক্ষক ছিলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা শিক্ষাদানের পাশাপাশি একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক সমাজগঠনের জন্য চেষ্টা করেছেন, শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। মুক্ত উদার সমাজের জন্য জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি সামাজিক সক্রিয়তার প্রয়োজন রয়েছে। এই দুটি বিষয়ের সমন্বয় হলেই সমাজের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটবে। আলোচনায় তিনি জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি আত্মশক্তির বিকাশের ওপর জোর দেন। সমাজের পরিবর্তনের জন্য সব অংশীজনকে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে জ্ঞানের শিখা জ্বালিয়ে রাখতে ও কর্মে নিয়োজিত হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা আলোচনায় বলেন, একাত্তরে জাতিকে থামিয়ে দিতে তালিকা করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। এটা গণহত্যা। প্রত্যেক গণহত্যার একটা উদ্দেশ্য থাকে। গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যটি গুরুত্বপূর্ণ।
সামিনা লুৎফা বলেন, বুদ্ধিজীবিতার ভূমিকার পরিবর্তন হয়েছে। বিগত স্বৈরশাসনের সময় আমাদের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী তাঁদের যথাযথ ভূমিকা পালন করেননি। সাহস করে সত্য কথা বলতে পারেননি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে যাঁরা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, বুদ্ধিজীবিতার ক্ষেত্রে তাঁরা রেখেছেন নতুন ভূমিকা। ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে গুম-খুন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখনো অনেকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। “মায়ের ডাক” এখনো তাঁদের সন্ধান করছে। এই নিখোঁজ মানুষগুলো কোথায়? কার কাছে আমরা এই প্রশ্ন করব, নাগরিক হিসেবে এসব প্রশ্ন করা আমাদের দায়িত্ব।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথমা প্রকাশনের মেরিনা ইয়াসমিন।
বিজয় বইমেলায় প্রথমা প্রকাশনের বই সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ, অন্য প্রকাশনীর বই ২৫ শতাংশ এবং বিদেশি বই সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছাড়ে কেনা যাবে।
প্রথমা প্রকাশন পাঠকের হাতে ভালো মানের বই তুলে দিতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে বইমেলার আয়োজন করে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় এবারও ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হয়েছে ১০ দিনের বিজয় বইমেলা। মেলা প্রতিদিন বেলা ১১টায় খুলবে, বন্ধ হবে রাত ৮টায়। চলবে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেলার পৃষ্ঠপোষকতা করছে এইচএসবিসি ব্যাংক।
আগামীকাল বিকেল চারটায় শুরু হবে আলোচনা অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট লেখক ও সমাজচিন্তক বদরুদ্দীন উমর ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাহ হাসান আলোচনা করবেন।