বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সন্তুষ্ট কিনা, তা জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শ্রমবিষয়ক প্রতিনিধি দল। এর পাশাপাশি তিন সচিবের সঙ্গে বৈঠকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নিবর্তনমূলক আটকের মত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছে। প্রতিনিধি দলটি আশা করে, আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থানসচিব এহছানে ইলাহী আজ বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। এর আগে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষসহ তিন সচিব ইইউর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা প্যাম্পালোনির নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থানসচিব এহছানে ইলাহী বলেন, ‘শ্রম খাতের উন্নয়নে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনার ৯টি লক্ষ্যের ৮০ শতাংশ আমরা পূর্ণ করেছি। সংশোধন নিয়ে তারা জানতে চেয়েছে। শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে আইএলও সন্তুষ্ট কিনা, জানতে চেয়েছিল ইইউ প্রতিনিধি দল। আমরা বলেছি, এ প্রক্রিয়ায় আমরা আইএলওর সঙ্গে যুক্ত আছি।’
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, ‘শ্রম খাতের অশান্ত অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইইউ প্রতিনিধি দল আশা করে, এটা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেছে। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে ওরা প্রশ্ন করেনি। আমরা তাদের কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবে তারা বলেছে, এটা নিয়ে সব পক্ষ একমত হতে পারেনি।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, আলোচনায় মানবাধিকারের কিছু কিছু বিষয় উঠে এসেছে। তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নিবর্তনমূলক আটকের বিষয়ে ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) বা সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনার আলোকে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। তবে তাঁরাও আশা করে যে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।’
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানির ৮৫ ভাগ আসে পোশাকশিল্প থেকে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আমাদের জন্য যদি জিএসপি প্লাস থাকে এবং একই সঙ্গে এ খাত যদি শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে থাকে তাহলে তো এটা অর্থহীন। তাই আমরা পোশাকশিল্প খাতকে যুক্ত করতে বলেছি। জিএসপি প্লাসের বাংলাদেশ এর মধ্যেই ৩২ সনদ সই করে বাস্তবায়নের নানা পর্যায়ে আছে। আমরা বলেছি আমাদের পোশাকশিল্প খাতের সাফল্যকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। সাফল্যকে উৎসাহিত করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের শ্রম খাতের অগ্রগতি দেখতে ইইউ প্রতিনিধিদল গত রোববার ৫ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছে। প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরকালে শ্রম আইন সংশোধন পরবর্তী পরিস্থিতি, শিশুশ্রম বিলোপ ও শ্রমিকবিরোধী সব ধরনের সহিংসতা নিরসনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করছে।