সংবিধান সংশোধনের রাজনীতি—৫

এরশাদের ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেয় সপ্তম সংশোধনী

প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন হলো সংবিধান। ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। গত ৫০ বছরে এ সংবিধান ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধন শুধু ‘তাত্ত্বিক’ বিষয় নয়, সব সময় এর একটি প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য থাকে। সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়, এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের সংকট, যেকোনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা, সামরিক শাসন, সরকারগুলোর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা—এ সবকিছুই সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। সংবিধান সংশোধন নিয়ে আট পর্বের এই লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রতি রোববার প্রকাশিত হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্ব

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়। এতে বিএনপির প্রার্থী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার বিপুল ভোটে জয়ী হন। ২০ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এবং ২৭ নভেম্বর ৪২ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বিএনপি সরকারের মধ্যে তীব্র কোন্দল দেখা দেয়।

অন্যদিকে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নিজের অবস্থান শক্ত এবং সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ বাড়ান এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নানা কথাবার্তা বলেন। রাষ্ট্রপতি সাত্তারের নেতৃত্বাধীন বিএনপিতে দলাদলি তখন চরমে। মন্ত্রীদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল।

এ অবস্থায় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক অভ্যুত্থানে সাত্তার ক্ষমতাচ্যুত হন। দেশে সামরিক আইন জারি করে এরশাদ নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন। মন্ত্রিসভা বাতিল ও সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ২৭ মার্চ এরশাদ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি ‘স্বাস্থ্যগত’ কারণে পদত্যাগ করেন। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদ হয়ে যান রাষ্ট্রপতি।

এরশাদ তাঁর পূর্বসূরি সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক কৌশল অনুসরণ করলেও দুজনের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপট ছিল আলাদা। জিয়ার ক্ষমতা দখলের সময় দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছিল। কোনো নির্বাচিত সরকার ছিল না। অন্যদিকে এরশাদ সদ্য নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছিলেন। ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ থাকলেও কোনো রাজনৈতিক শূন্যতা ছিল না।

এরশাদ ক্ষমতা ধরে রাখতে জিয়ার পথেই হাঁটেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে তিনি প্রথমে ‘জনদল’ এবং পরে আরও কয়েকটি দল নিয়ে ‘জাতীয় ফ্রন্ট’ গঠন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি জিয়ার ‘হ্যাঁ–না’ ভোটের আদলে গণভোটের আয়োজন করেন। গণভোটে এরশাদের পক্ষে ৯৪ ভাগ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়।

১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জনদল ও জাতীয় ফ্রন্ট বিলুপ্ত করে এরশাদ ‘জাতীয় পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ওই বছরের ৭ মে সংসদ নির্বাচন হয়। বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করেছিল। নবগঠিত জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও সিপিবি নির্বাচনে অংশ নেয়। প্রশ্নবিদ্ধ এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসনে জয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং আওয়ামী লীগ ৭৬টি আসনে জয়ী হয়ে সংসদের প্রধান বিরোধী দল হয়। ১৯৮৬ সালের ৩১ আগস্ট এরশাদ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে সেপ্টেম্বরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হন। ১৫ অক্টোবর আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে তিনি রাষ্ট্রপতি হন। এরপর ১১ নভেম্বর সংসদে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী বিল উত্থাপন করা হয়।

সপ্তম সংশোধনী

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদের ক্ষমতা দখল সংবিধানের আরেকটি সংশোধনীকে অনিবার্য করে তুলেছিল। কারণ, একটি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে তাঁর ক্ষমতা দখল ছিল অসাংবিধানিক ও বেআইনি। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে সামরিক আইন বলবৎ ছিল। এ সময়ে সামরিক ফরমান, আদেশ ও প্রবিধানের মাধ্যমে সংবিধানের বিভিন্ন রদবদল হয়। এসবের বৈধতা দিতে এবং এগুলো নিয়ে কোনো আদালতে যাতে প্রশ্ন না তোলা যায়, সে জন্যই সংসদে সপ্তম সংশোধনী পাস করা হয়েছিল। সপ্তম সংশোধনী বিল উত্থাপনের সময় সংসদের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ অধিবেশনে যোগ দেয়নি। কিন্তু সরকারঘনিষ্ঠ অন্যান্য বিরোধী দলের সমর্থন ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের ভোটে তা পাস হয়ে যায়।

নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত একটি সংসদ এরশাদের ক্ষমতা দখলকে আইনগত বৈধতা দিলেও তাঁর রাজনৈতিক বৈধতা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা, বেশির ভাগ বিরোধী দল তাঁর সরকারকে বৈধ হিসেবে মেনে নেয়নি। তারা তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিল। ১৯৮৭ সালের শেষ দিকে এই আন্দোলন তীব্র হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগসহ বিরোধীদলীয় বেশির ভাগ সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেন। এ অবস্থায় এরশাদ ২৭ নভেম্বর জরুরি অবস্থা জারি এবং ৭ ডিসেম্বর সংসদ ভেঙে দেন। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ আবার সংসদ নির্বাচন হয়। ফ্রিডম পার্টি ও এরশাদের অনুগত ছোটখাটো কিছু দল তাতে অংশ নেয়।

আবার একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দুই–তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়ী হয়। এরশাদ আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো নিয়ে বাংলাদেশ পলিটিকস: প্রবলেমস অ্যান্ড ইস্যুজ বইয়ে রওনক জাহান লিখেছেন, ‘এরশাদ আমলে ১৯৮৪ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, ১৯৮৫ সালে গণভোট, ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৮৮ সালে আরেকটি সংসদ নির্বাচনসহ অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু এসব নির্বাচন সরকারের জন্য বৈধতার চেতনা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়।’

২০১০ সালে হাইকোর্ট সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। ২০১১ সালে আপিল বিভাগের রায়েও তা বহাল থাকে। এ রায়ের ফলে সামরিক অভ্যুত্থানে এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ অবৈধ বলে গণ্য হয়।

অষ্টম সংশোধনী

প্রধান দুই বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ১৯৮৮ সালের নির্বাচন বর্জন করায় নির্বাচন যেমন অংশগ্রহণমূলক হয়নি, তেমনি তা নিয়ে মানুষের আগ্রহও তেমন ছিল না। সেনাবাহিনী তখন পর্যন্ত এরশাদের অনুগত থাকলেও তাঁর জনসমর্থন ছিল কম। এ অবস্থায় এরশাদ এমন কিছু করার পরিকল্পনা করেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন পেতে পারেন। সংবিধানে আনা হয় অষ্টম সংশোধনী। ১৯৮৮ সালের ৭ জুন সংসদে এ–সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করা হয় এবং ৯ জুন তা পাস হয়।

অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ঘোষণা করা হয়। মূল সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম সম্পর্কে কোনো বিধান ছিল না। অষ্টম সংশোধনীতে অনুচ্ছেদ ২–এ উপ–অনুচ্ছেদ ‘২ক’ যোগ করে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে।’ এই সংশোধনীতে আরেকটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছিল। সেটি হলো, রাজধানীর বাইরে হাইকোর্টের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন।

ইসলামকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ করা ছিল এরশাদের একটি রাজনৈতিক কৌশল। জনসমর্থন ও রাজনৈতিক বৈধতা না পেয়ে তিনি এই কৌশল কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তাঁর বিএনপি: সময়–অসময় বইয়ে লিখেছেন, ‘...ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার জন্য দেশে কোনো আন্দোলন হয়নি, রাজপথে কোনো বিক্ষোভ মিছিল হয়নি।

এ বিল পাস করার জন্য সরকারের কোনো দায় ছিল না। তবু এরশাদ এটা করলেন একটা ধারণা দেওয়ার জন্য যে তিনিই ইসলামের একজন খাঁটি সেবক। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই বিল আর রদ করা হবে না। কেননা, যিনিই এই বিল বাতিলের চেষ্টা করবেন, তাঁকেই ইসলামের শত্রু হিসেবে দেখানো হবে। এ দেশে ‘‘ইসলামের শত্রু’’—এই পরিচিতি নিয়ে কারও পক্ষেই রাজনীতি করা সম্ভব নয়। এরশাদ বুঝেশুনেই এই চালটি দিয়েছিলেন।’

এই সংশোধনীতে ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও আন্দোলন হয়েছিল। আইনজীবীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন পেশাজীবী সংগঠন এবং অন্যান্য ছাত্রসংগঠনও এই আন্দোলনে যুক্ত হয়। হরতাল ও আদালত বর্জনের মতো কর্মসূচিও পালিত হয়। এ অবস্থায় ১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া এক রায়ে অষ্টম সংশোধনীর অন্তর্ভুক্ত হাইকোর্ট বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ–সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ সংবিধান পরিপন্থী বলে তা বাতিল করা হয়।

নবম সংশোধনী

১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি–শাসিত সরকারব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। এতে একজন উপরাষ্ট্রপতির পদও রাখা হয়। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কোনো বিধান ছিল না। উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া চতুর্থ সংশোধনীতে একজন রাষ্ট্রপতি পদে কত মেয়াদ থাকতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করা ছিল না।

অর্থাৎ একই ব্যক্তি চাইলে বারবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারতেন। নবম সংশোধনীতে এই দুটি বিষয় যোগ করে বলা হয়, (১) উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে প্রত্যক্ষ ভোটে; (২) রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন একই দিন অনুষ্ঠিত হবে; (৩) রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি উভয়ের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর; (৪) কোনো ব্যক্তি টানা দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারবেন না এবং (৫) জাতীয় সংসদের তিন–চতুর্থাংশ ভোটে উপরাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। (এর আগে রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় উপরাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারতেন)।

১৯৮৯ সালের ৬ জুলাই নবম সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপন করা হয়। ১০ জুলাই এটি পাস হয় এবং ১১ জুলাই রাষ্ট্রপতি এতে সম্মতি দেন। সংবিধানের এ সংশোধনী কার্যকরের তারিখ দেওয়া হয় ১৯৯১ সালের ১ মার্চ।

রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি পদে উল্লিখিত পরিবর্তনের ফলে আপাতদৃষ্টে নবম সংশোধনীকে গণতান্ত্রিক মনে হতে পারে। কিন্তু এসব পরিবর্তনও ছিল দীর্ঘ মেয়াদে এরশাদের ক্ষমতা ধরে রাখার আরেকটি কৌশল। কেননা সরাসরি নির্বাচনের নিয়ম করা হলেও উপরাষ্ট্রপতিকে কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তিনি শুধু রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে সেই দায়িত্ব পালন করবেন—এমন বিধান ছিল। তার চেয়েও বড় কথা, ১৯৮৯ সালে ১১ জুলাই সংশোধনীটি পাস হলেও তা ১৯৯১ সালের ১ মার্চ অর্থাৎ প্রায় ১ বছর ৭ মাস পর কার্যকর হবে বলে বলা হয়।

এমনটা করার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল, এরশাদের আরও দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা। কারণ, সংবিধান সংশোধনী কার্যকর করার তারিখ থেকে বোঝা যায়, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি একই পদে পুনরায় নির্বাচিত হলে সেটা হতো তাঁর প্রথম মেয়াদ। এর পরে নির্বাচিত হলে সেটা হতো তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ। মোদ্দাকথা, নবম সংশোধনী ছিল এরশাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করার একটা চেষ্টা। তবে নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন এবং ১৯৯১ সালে পরবর্তী সংসদে দ্বাদশ সংশোধনী পাস হওয়ায় নবম সংশোধনী অকার্যকর হয়ে পড়ে।

দশম সংশোধনী

’৭২–এর মূল সংবিধানে ছিল, সংবিধান কার্যকরের তারিখ থেকে পরবর্তী ১০ বছর সংসদে ৩০০টি আসনের বাইরে অতিরিক্ত ১৫টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। সেই হিসাবে সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ ১৯৮২ সালে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ এবং তা সংরক্ষণের মেয়াদ ১০ বছর থেকে বাড়িয়ে ১৫ বছর করা হয়। ফলে ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদে কোনো সংরক্ষিত আসন ছিল না।

কিন্তু জাতীয় পার্টির মহিলা শাখা ও দলটির নারী নেতারা সংরক্ষিত আসনের বিষয়টি নিয়ে এরশাদকে চাপ দেন। এ অবস্থায় এরশাদ আমলের শেষ দিকে সংরক্ষিত নারী আসন বহাল করতে দশম সংশোধনী আনা হয়েছিল। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান আনা হয়েছিল এই সংশোধনীতে। ১৯৯০ সালের ১০ জুন এটি সংসদে উত্থাপন করা হয় এবং ১২ জুন তা পাস হয়।

তথ্যসূত্র

১. রওনক জাহান, বাংলাদেশ পলিটিকস: প্রবলেমস অ্যান্ড ইস্যুজ, ইউপিএল

২. মহিউদ্দিন আহমদ, বিএনপি: সময়–অসময়, প্রথমা প্রকাশন

৩. মাহমুদুল ইসলাম, কনস্টিটিউশনাল ল অব বাংলাদেশ, মল্লিক ব্রাদার্স