কর্মীর লেখা

হ্যালো বললে সবাই চেনেন

প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কর্মীদের কাছে লেখা আহ্বান করা হয়েছিল। তাঁরা লিখেছেন প্রথম আলোকে নিয়েই। কর্মীদের নির্বাচিত কিছু লেখা নিয়েই এ আয়োজন

‘বেকার’ শব্দটা তখন যেন আমার গায়ের সঙ্গে রীতিমতো গেঁথে গেছে। যাওয়ারই কথা, ৩০ বছর বয়সে কুষ্টিয়া শহর চষে বেড়ানো ছাড়া কীই–বা আর করতাম আমি! কিন্তু বেকারের অপবাদ ঘোচাতে কিছু তো করা দরকার। চলে এলাম ঢাকায়। এখানে-ওখানে চাকরির চেষ্টা করে শেষে যোগ দিলাম নতুন এক পত্রিকায়। সেই পত্রিকার নাম প্রথম আলো। এখানে আমার দায়িত্বটাও অন্য রকম—একজনের সঙ্গে অন্যজনের সংযোগ করিয়ে দেওয়া!

১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর অফিসের প্রথম দিনে আমার কাজ ছিল—শেখা! সিনিয়রদের কাছে টেলিফোন অপারেটিংয়ের প্রয়োজনীয় কাজগুলো শেখার পাশাপাশি খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানালামও। আর টেলিফোনে যখন ‘হ্যালো’ বলা শুরু করলাম, তখনই একটু একটু করে অফিসে এবং অফিসের বাইরের অনেকেই আমার কণ্ঠের প্রশংসা করলেন। আমিও বুঝতে পারলাম, আমার কণ্ঠ সুন্দর, উচ্চারণ প্রমিত। অথচ কুষ্টিয়া শহরে কেউ আমাকে কোনো দিন বলেনি, ‘তোর কণ্ঠ অনেক সুন্দর, তুই কবিতা আবৃত্তি করিস না কেন?’

এরপর পাঁচ থেকে ছয়জন ডেকে নিলেন। বিজ্ঞাপনের জন্য আমার ভয়েস রেকর্ডিং করলেন। যদিও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। তবে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।

তখন প্রথম আলো ছিল সিএ ভবনের দ্বিতীয় তলায়, ছোট পরিসরে। সবাই সবাইকে চিনতাম। এরপর একটু একটু করে প্রথম আলো বড় হলো। সিএ ভবন ছেড়ে প্রথম আলো ভবন (আমরা বলি হোয়াইট হাউস) ও প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবনে চলে এলাম। এখন অনেক সহকর্মী আমাদের। কাউকে চিনি আবার কাউকে চিনি না। কিন্তু একটা জায়গায় আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। যখন টেলিফোনের এ প্রান্ত থেকে ‘হ্যালো’ বলি, তখনই অপর প্রান্ত থেকে ‘দাদা’ অথবা ‘প্রবীর’ বলে ওঠেন। এটা শুধু ঢাকা অফিসেই নয়, সারা দেশের অধিকাংশ প্রতিনিধিই এভাবে সম্বোধন করেন। আর এখানেই আমার মনের সব প্রশান্তি।

এর সঙ্গে একটা বিষয় না জানালে নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে করব, সেটা হলো, প্রথম আলো আমাকে একটা সংসার দিয়েছে আর দিয়েছে আর্থিক সচ্ছলতা। বাড়ি, গাড়ি করতে পারিনি, তবে নিশ্চয়তা পেয়েছি প্রতি পদক্ষেপে। কেউ যখন জানতে চায় কোথায় কাজ করি, গর্বভরে বলি, ‘আমি প্রথম আলোয় কাজ করি।’
প্রথম আলো আমার অহংকার।

প্রবীর কুমার পাল
জ্যেষ্ঠ টেলিফোন অপারেটর
টেলিফোন পরিষেবা বিভাগ