ফোর্বসের এশিয়ার তরুণ উদ্যোক্তাদের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি

বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’-এর তৈরি করা এশিয়ার ৩০ বছরের কম বয়সী উদ্যোক্তাদের তালিকায় বাংলাদেশের নয়জন স্থান পেয়েছেন। বাংলাদেশি তরুণেরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের উদ্ভাবনী শক্তি ও অবদানের জন্য এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।

ফোর্বস আজ বৃহস্পতিবার ‘থার্টি আন্ডার থার্টি এশিয়া’ তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ৩০০ উদ্যোক্তাকে বাছাই করা হয়েছে। তাঁরা এই অঞ্চলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনী ভাবনা নিয়ে এসেছেন এবং বিভিন্ন শিল্প খাতের রূপান্তরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে ফোর্বস উল্লেখ করেছে।

১০টি শ্রেণিতে তরুণদের এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো ক্রীড়া ও বিনোদন; ফাইন্যান্স অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল; এন্টারপ্রাইজ টেকনোলজি; গণমাধ্যম, বিপণন ও বিজ্ঞাপন; কনজ্যুমার টেকনোলজি; শিল্প, উৎপাদন ও জ্বালানি; শিল্পকলা; সামাজিক প্রভাব; রিটেইল ও ই-কমার্স এবং স্বাস্থ্যসেবা ও বিজ্ঞান।

ফোর্বসের তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশিরা হলেন—

আবদুস গাফ্ফার সাদী, মো. তুষার ও মো. শহীদুল ইসলাম

এই তিন তরুণ ঢাকাভিত্তিক ‘দ্রুত লোন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তাঁরা ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কাজ করে দেন। একই সঙ্গে ঋণদাতাদের সুবিধার জন্য যাঁকে ঋণ দেওয়া হবে, তিনি তা পাওয়ার যোগ্য কি না, তা যাচাইয়ে সহায়তা করছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করার পর এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে ২০ লাখ ডলারের (প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি টাকা) বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। গত নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।

সুলতান মনি ও মুমতাহিনা আনিকা

তাঁরা ফিনটেক তথা ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজি (আর্থিক প্রযুক্তি) স্টার্টআপ জাতিক প্রতিষ্ঠা করেছেন। ছোট কোম্পানিগুলোকে তাদের অ্যাকাউন্টিং সামলাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয় এই স্টার্টআপ। তাদের সেবার একটি এমন যে স্মার্টফোনের সঙ্গে যুক্ত একটি বিজনেস ক্যালকুলেটর দিয়ে আর্থিক হিসাব-নিকাশ ও প্রতিবেদন তৈরি করা যায়। ছোট কোম্পানিগুলোকে ই-কমার্স ওয়েবসাইটে সহজ পথ বাতলে দেয় তারা। গত আগস্টে এই স্টার্টআপ ১৬ লাখ ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।

ফাহাদ আহমেদ

২০২২ সালে গড়ে ওঠা উইন্ড ডট অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনার সেবা দেন তাঁরা। এই কাজে প্ল্যাটফর্মটি ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তাদের সেবা দ্রুত ও সাশ্রয়ী। গত নভেম্বরে তারা ৩৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। গ্লোবাল ফাউন্ডারস ক্যাপিটাল ও স্পার্টান গ্রুপের নেতৃত্ব কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই বিনিয়োগ করেছে।

উইন্ড প্রতিষ্ঠার আগে ফাহাদ রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও তৈরিতেও যুক্ত ছিলেন। পাঠাওয়ে খাবার ডেলিভারি, পেমেন্ট ও রাইডের জন্য গাড়ি ডাকার সেবা চালুতে তাঁর ভূমিকা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে স্নাতক করা ফাহাদ নিজে নিজেই কোডিং শিখেছেন।

রেদোয়ান আহমেদ

পুরস্কারজয়ী ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক রেদোয়ান আহমেদ। বার্তা সংস্থা এএফপির হয়ে রোহিঙ্গা সংকটের খবর সংগ্রহ করেন তিনি। এই কাজের জন্য তিনি ২২তম হিউম্যান রাইটস প্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। এ ছাড়া ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের জন্য তাঁর অনুসন্ধানকাজে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মীদের বঞ্চনার শিকার হওয়ার গল্প উঠে আসে।

সংবাদ প্রতিবেদন করার পাশাপাশি রেদোয়ান বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া নামে একটি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। স্থানীয় সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করে এই ফোরাম। ২০২১ সালের রেহাম আল-ফারা মেমোরিয়াল জার্নালিজম প্রোগ্রামের একজন ফেলো তিনি।

মেহেদী শরণ

মেহেদী শরণ ঢাকায় গৃহকর্মী সরবরাহের অ্যাপ হ্যালোটাস্কের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ঘণ্টাপ্রতি গৃহকর্মীর সেবার জন্য বুকিং দেওয়া, মাসিক সাবস্ক্রিকশন, যেসব গৃহকর্মীকে কাজে দেওয়া হয়, তাঁদের যাচাই-বাছাই এবং তাঁরা যেন সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার না হন, তা নিশ্চিতে কাজ করে থাকে।

হ্যালোটাস্ক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ও অক্সফাম থেকে অনুদান পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সাল নাগাদ এক লাখ গৃহকর্মীকে তাদের সেবায় যুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি বিদেশের বাজারেও তারা কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে চায়।

আনুশা আলমগীর

আনুশা আলমগীর বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী একজন বাংলাদেশি শিল্পী। তিনি লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব আর্ট থেকে আর্কিটেকচারে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি নারী, যাঁর ‘পর্দা’ নামে চলচ্চিত্র ২০২৩ সালের ভেনিস বিয়েনালে অনুষ্ঠিত ১৮তম ইন্টারন্যাশনাল আর্কিটেকচার এক্সিবিশনে প্রদর্শিত হয়েছে।

ভাস্কর্য, চিত্রকর্ম, ফটোগ্রাফি ও নানা ধরনের পরিবেশনায় পারদর্শী আনুশা আলমগীর। তাঁর এসব কাজে স্থাপত্যবিদ্যার ধারণার প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। তাঁর শিল্পকর্ম লন্ডনের ঐতিহ্য কালেকটিভ, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের লা-লা ল্যান্ড গ্যালারি এবং ঢাকার দৃক গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে।