দেশে তরুণের সংখ্যা বেশি। তারা বিষণ্নতায়ও ভোগে বেশি। তাই শরীরের মতো মনেরও যত্ন নিতে হবে তরুণদের। নিজেদের মনের সমস্যার কথা খুলে বলতে হবে। ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নিজেদের জীবন রঙিন করার দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক এক কর্মশালায় এসব কথা উঠে এসেছে। আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই কর্মশালা হয়। কর্মশালার আয়োজক প্রথম আলো বন্ধুসভা ও ইউনিমেড ইউনিহেলথ।
কর্মশালার শুরুতে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, কথা বললে মনের কষ্ট লাঘব হয়। তাই কথা বলতে হবে, কথা শুনতে হবে। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অন্য সব রোগের মতোই একটি রোগ—মানসিক রোগ। বেঁচে থাকা একটি সুখ। তাই বেঁচে থেকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, আগে মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে অপচিকিৎসা ও নির্যাতন হতো। তবে এখনো তা কমে যায়নি। একসময় পাশ্চাত্যে আত্মহত্যা বেশি ছিল। এখন তা উন্নয়নশীল দেশেও বাড়ছে। এ কর্মশালা একটি ভালো উদ্যোগ। এ ধরনের কর্মশালা থেকে অর্জিত জ্ঞান বন্ধু ও পরিচিতজনদের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মার বিপণন বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ শামীম আলম খান বলেন, দেশে তরুণের সংখ্যা বেশি। তরুণ সমাজে বিষণ্নতাও বেশি। তাই তরুণদের প্রতি নজর দিতে হবে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে। মন একটি জটিল বিষয়। মনকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। এখন ভাগাভাগির (শেয়ারিং) চেয়ে দেখানোর (শো-অফ) প্রবণতা-প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। এ প্রবণতা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
কর্মশালার প্রথম সেশনে মনের যত্ন নিয়ে কথা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক সিফাত ই সাঈদ। তিনি বলেন, চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ, কল্পনা, স্মৃতি নিয়েই মানুষের মন। শরীরের কিছু হলে মানুষ দৌড়ে চিকিৎসকের কাছে যায়। কিন্তু মনের কিছু হলে যায় না। মনের সমস্যার জন্যও চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, তরুণদের মন চঞ্চল, গতিশীল ও সংবেদনশীল। ভালো না লাগা, ভুলে যাওয়া, দুশ্চিন্তা, মেজাজ খিটখিটে থাকা—এগুলো মানসিক সমস্যার কিছু লক্ষ্মণ। এগুলো থেকে উত্তরণের জন্য শারীরিক অনুশীলন, সঠিক সময়ে ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ইতিবাচক চিন্তা-আচরণ করা, নিজের ভালো লাগার কাজ করতে হবে। এসব চেষ্টা ব্যর্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
কর্মশালায় বর্তমানকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান। তিনি বলেন, মানুষ বর্তমানে বাঁচে। তাই বর্তমানে নিজেকে, নিজের সঙ্গে থাকা মানুষগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। নিজের জীবন রঙিন করার দায়িত্ব নিজেরই।
প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায় বলেন, চাকরি না পেলে, সম্পর্কে অবনতি হলে, পারিবারিক কোনো ইস্যুতে হতাশ হওয়া যাবে না। সবারই সাফল্য আসে সঠিক সময়ে। তার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে।
প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিকের সঞ্চালনায় কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মার বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সাফায়েত মাহমুদ, প্রথম আলো ট্রাস্ট সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা প্রমুখ।